স্পোর্টস ডেস্ক : একেই বলে সমানে সমানে লড়াই। পেন্ডুলামের মত দুলেছে ম্যাচের ভাগ্য। দর্শক পেয়েছে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় মজেছে দর্শকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ী হলো টিম টাইগার। কানায় কানায় পরিপূর্ণ প্রেমাদাসার গ্যালারির সামনে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে কাঁদিয়ে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে গেল টিম টাইগার। ২ উইকেটের এই জয়ে আগামী ১৮ মার্চ শিরোপার লড়াইয়ে ভারতের মুখোমুখি হবে সাকিব আল হাসানের দল।
কলম্বোর আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ১৬০ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিমের উড়ন্ত সূচনার পর ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দলীয় ১১ রানে আকিলা ধনাঞ্জয়ার বলে কোনো রান না করেই ক্যাচ দেন লিটন দাস। অনেকদিন পর তিন নম্বর পজিশনে দেখা যায় সাব্বির রহমানকে। কিন্তু আবারও ব্যর্থ হন তিনি। ৮ বলে ৩ চারে ১৩ রান করে ধনাঞ্জয়ার বলেই স্টাম্পড হয়ে যান তিনি। ৩৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন তামিম-মুশফিক। কিন্তু আজ আর ইনিংস বড় করতে পারেননি ‘মি. ডিপেন্ডেবল’। ২৫ বলে ২৮ রান করে অপোনসোর বলে পেরেরার তালুবন্দি হন।
৪১ বলে ৪টি চার এবং ১ ছক্কায় ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। কিন্তু ৫০ রানেই গুনাথিলাকার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। সৌম্য সরকার যথারীতি ব্যর্থ। ১১ বলে ১০ রান করে জীবন মেন্ডিসের বলে সেই উইকেটের পেছনেই ধরা পড়েন। পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকে ম্যাচের ভাগ্য। মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে হাল ধরার চেষ্টা করেও উদানার বলে ধনাঞ্জয়ার তালুবন্দি হন অধিনায়ক সাকিব (৭)।
মেহেদী মিরাজকে নিয়ে লড়াই শুরু করলেন মাহমুদ উল্লাহ। কোনো রান না করেই রান-আউট হয়ে যান মিরাজ। গ্যালারিতে লঙ্কান সমর্থকেরা ‘নাগিন নৃত্য’ নেচে উদযাপন শুরু করে দেয়। গত ১০ মার্চ তাদের হারিয়ে এই নাচটাই নেচেছিলেন মুশফিক। কিন্তু বলটি নো বল কিনা এই নিয়ে বিবাদ শুরু হয় দুই দলে। আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কে জড়ান সাকিব। আবারও শুরু হয় খেলা।
এর আগে নিদাহাস ট্রফির অঘোষিত সেমিফাইনালে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। শুরুতেই ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে বিপদে পড়ে যায় তারা। দলীয় ১৫ রানেই ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা টাইগার ক্যাপ্টেনের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন দানুশকা গুনাথিলাকা (৪)। এরপর মঞ্চে আবির্ভাব ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমানের। তার বলে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন অপর ওপেনার কুশল মেন্ডিস (১১)।
উইকেটে সেট হওয়ার আগেই মেহেদী মিরাজের কৃতিত্বে রান-আউট হয়ে যান উপুল থারাঙ্গা। তিনি ৫ বলে মাত্র ৫ রান করেছেন। টুর্নামেন্টে বেশ ভালো খেলে চলা দাসুন শানাকা গোল্ডেন ডাক মেরে পরিণত হয়েছেন মুস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকারে। কাটার মাস্টারের বলে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন মুশফিক। ৩২ রানে ৪ উইকেট পতনের পর মঞ্চে আবারও মিরাজ। আগের উইকেটটা রান-আউট হওয়ায় তার নামের পাশে যোগ হয়নি। এবার জীবন মেন্ডিসকে (৩) মুস্তাফিজের তালুবন্দি করে উইকেটটি নিজের নামের পাশে লেখান এই অল-রাউন্ডার।
এমতাবস্থায় থিসারা পেরেরা আর কুশল পেরেরা মিলে হাত খুলে মারতে থাকেন। ৪১ রান থেকে দুজনে মিলে দলের স্কোরকে একশ পার করেন। ৩২ বলে ৬ চার ১ ছক্কায় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল। তাকে ব্যক্তিগত ৬১ রানে মেহেদী মিরাজের ক্যাচে পরিণত করেন সৌম্য সরকার। অপর হাফ সেঞ্চুরিয়ান অধিনায়ক থিসারা পেরেরা ৩৭ বলে ৫৮ রান করে রুবেলের শিকার হন। নির্ধারিত ২০ ওভারে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৫৯ রান।
এই ম্যাচে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি টাইগার একাদশে। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে জায়গা দিতে একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন গত ম্যাচে সুযোগ পাওয়া পেসার আবু হায়দার রনি। অন্যদিকে লঙ্কান একাদশে এসেছে দুটি পরিবর্তন। দলে এসেছেন ইসুরু উদানা এবং আমিলা অপনসো। এই দুইজনকে জায়গা দিতে বাদ পড়তে হয়েছে পেসার সুরঙ্গা লাকমাল এবং দুশ্মন্ত চামিরাকে।