Current Date:Oct 5, 2024

মিতু হত্যার দুই বছর: মুছার সঙ্গে ‘হারিয়ে’ গেছে তদন্তও

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: ব্যাপক আলোড়ন তোলা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের আজ দুই বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু এত দিনেও এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সুস্পষ্ট কোনো অগ্রগতি হয়নি। আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া আটকে আছে।

মামলার অগ্রগতি কী জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান দুই বছর ধরেই যে বক্তব্য দিচ্ছেন, সেই পুরনো বক্তব্যই নতুন করে দিয়েছেন কাছে।

তাঁর কথা : ‘নিখোঁজ মুছা সিকদারকে ধরতে অভিযান চলছে। তাকে পেলেই মিতুকে হত্যার নির্দেশ কে দিয়েছিলেন, তা বেরিয়ে আসবে। এরপরই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।’ মিতু হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিন ২০১৬ সালের ৫ জুনও তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্ক একই বক্তব্য দিয়েছিলেন এই তদন্তকারী কর্মকর্তা। নিখোঁজ মুছার সঙ্গে মামলার তদন্তও যেন ‘হারিয়ে’ গেছে।

চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা মুছা সিকদারের ‘রহস্যজনক নিখোঁজের’ বিষয়ে এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় জানিয়েছেন, ‘আর খুঁজে পাওয়া যাবে না মুছা সিকদারকে।’ তবে গণমাধ্যমে পরিচয় প্রকাশ করে ওই কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁরা বলছেন, মুছার সন্ধান চেয়ে নগর পুলিশ কমিশনার পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। সেই পুরস্কার ৫০ লাখ টাকা হলেও সমস্যা ছিল না। কারণ পুরস্কারের টাকা কারো পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসির মোড় এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে মিতু খুন হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই বাবুল আক্তারের সোর্স মুছার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছিলেন। কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার দুই বছরেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে মুছা সিকদারের স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, ২০১৬ সালের ২২ জুন মুছাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয়েছে অনেক আগেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। তাঁরা আরো জানিয়েছেন, সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এই মামলার তদন্ত পর্যায়ে পুলিশের তৎকালীন আইজি ও নগর পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহারের কিছু নির্দেশনা ছিল। এখন আইজিপি পরিবর্তন হয়েছে। ইকবাল বাহারও বদলি হয়েছেন। আসছেন নতুন কমিশনার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মিতু হত্যা মামলার তদন্তের বাঁকও ঘুরে যেতে পারে।

অবশ্য ‘তদন্তের বাঁক ঘুরতেও পারে’—এমন মন্তব্যের বিশদ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না কর্মকর্তারা। আলোচনায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই মামলায় এখনো পর্যন্ত বাদী হিসেবে বাবুল আক্তারের নাম সাক্ষী কলামেই আছে। কিন্তু মুছাকে ‘যদি’ পাওয়া যেত, তাহলে বাবুল আক্তারের নাম সাক্ষীর কলামে থাকত কি না—সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু ‘মুছাকে যদি আর খুঁজে’ পাওয়া না যায় তাহলে তদন্তের কী হবে—এ প্রশ্নের উত্তর দেননি কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ‘মুছার নিখোঁজের সঙ্গেই এই মামলার তদন্তের গতিপথ বদলে গেছে।’

চূড়ান্ত করে রাখা তদন্ত প্রতিবেদনের মর্ম অনুযায়ী, মিতু হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মুছা সিকদার। তার সহযোগীদের একজন কালু। মুছার নাম অভিযোগপত্রের এক নম্বরে থাকছে। মুছা ও কালু দুজনই থাকছে পলাতক আসামি হিসেবে। যুবলীগ নেতা ও মুছার বন্ধু-ব্যাবসায়িক অংশীদার এহতেশামুল হক হচ্ছেন হত্যাকাণ্ডে অস্ত্র সরবরাহ করে সহায়তা দেওয়ার অপরাধের অভিযুক্ত আসামি। গ্রেপ্তারের পর রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত রাশেদ ও নবী হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল মর্মে তথ্য পাওয়ার কথা উল্লেখ থাকছে অভিযোগপত্রে। তবে তারা দুজন মারা যাওয়ায় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের পরপরই গ্রেপ্তারকৃত যুবক রবিন ও গুন্নু মিয়ার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি মর্মে উল্লেখ করে তাদের অব্যাহতির সুপারিশও করা হচ্ছে। অবশ্যই এরই মধ্যে তারা দুজন আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। বাকি আসামি ওয়াসিম, শাহজাহান ও আনোয়ার হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং গ্রেপ্তারকৃত আসামি হিসেবে অভিযোগপত্রভুক্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে ওয়াসিম ও আনোয়ার হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ২০১৬ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তাদের জবানবন্দিতে অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ পায়।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বাবুলের শ্বশুরপক্ষ বাবুল ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় দাবি করলেও সময়ের ব্যবধানে তাদের মত পাল্টায়। এখন হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুলকে দায়ী করছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। দাম্পত্য কলহের জের ধরেই মিতুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে—এমন দাবি করছেন তিনি। অন্যদিকে বাবুলের দাবি, মিতুর মৃত্যুর পর তার এক বোনকে বিয়ে না করায় খেপেছে শ্বশুরপক্ষ।

এসবের কারণে বাইরে আলোচনায় আছে মামলায় বাবুল আসামি হচ্ছেন কি না? এই প্রশ্নের উত্তর কারো কাছে নেই। যেমন নেই ‘নিখোঁজ মুছার হদিস’। সূত্র: কালের কণ্ঠ

Share