মুকসুদপুরে বিয়ের ৮ মাসেই গৃহবধু সোনিয়ার মৃত্যু

0
110

মেহের মামুন গোপালগঞ্জ :

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে বিয়ের ৮ মাসের মধ্যেই গৃহবধু সোনিয়ার (২০) অপমৃত্যু হয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে। গত ৩ মে সোমবার মুকসুদপুর পৌরসভার গোলাবাড়িয়া গ্রামে এই মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। গৃহবধু সোনিয়ার পরিবারের দাবি তার স্বামী শামিম শেখ, শশুর রহমান শেখ, শাশুড়ি, সুইটি বেগম ও ননদ শিলা আক্তার এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে।
ঘটনাসুত্রে জানাযায়, গোলাবাড়িয়া গ্রামের রহমানের পুত্র শামিমের সাথে একই গ্রামের সোনিয়া আক্তারের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। সম্পর্ক থাকা অবস্থায় সোনিয়ার অন্যত্র বিয়ে হয়। বিয়ের ২ মাস পার না হতেই শামিম কৌশলে সোনিয়াকে স্বামী ত্যাগ করতে বাধ্য করায়। স্বামী পরিত্যাক্তা সোনিয়া বাবার বাড়িতে অবস্থান করে। দীর্ঘ ৪ বছর পরে তারা দুজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পরিবারের লোকজন সম্মিলিতভাবে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকেই শামিমের পরিবার যৌতুকের ১লাখ টাকা দাবি করে আসছিলো। কিন্তু সোনিয়ার পরিবার যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সোনিয়াকে অমানুষিক নির্যাতন করতে থাকে তার শাশুড়ি সুইটি বেগম ও ননদ শিলা আক্তার। পরে সে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ঢাকায় অবস্থানরত তার স্বামীর কাছে চলে যায়। কিন্তু সেখানে যেয়েও তার শেষ রক্ষা হয়নি। গ্রামে থাকা মা আর বোনের কথা শুনে স্বামী শামিমও তাকে নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে সোনিয়ার পিতা বেলায়েত মিয়া তার মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে আসার ৪ মাস অবধি খোজ খবর নেয়নি শামিমের পরিবার। মৃত্যুর ৪ দিন পূর্বে শামিমের মা-বাবা এবং বোন এসে অনেক আকুতি মিনতি করে সোনিয়াকে বাড়িতে নিয়ে যায়।

সোনিয়ারা মা নাসিমা অভিযোগ করে জানান, ঘটনার দিন সকালে আমার মেয়ে লায়লা সোনিয়ার শশুর বাড়িতে গেলে দেখে তার বোনকে শাশুড়ি আর ননদে মিয়ে গালিগালাজ করছে। পরে সে বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে আসার পরে পার্শ্ববর্তী বাড়ির জরিনার মেয়ে বাক প্রতিবন্ধী শিরিন এসে আকার ইঙ্গিতে বুঝাতে চায় যে সোনিয়াকে মারধর করতেছে। শুনে আমার স্বামীকে ফোন দিয়ে জানাই। এসময়ই পাশের বাড়ির হায়াদারের স্ত্রী ফিরোজা বেগম এসে জানায় আমার মেয়ে মরেগেছে। ওরা আমার মেয়েকে মেরে গলায় ওড়না পেচিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছিলো। আমি আমার মেয়ে হত্যাকারীদের বিচার চাই। বিশেষ করে তার শাশুড়ি সুইটি বেগম এবং ননদ শিলা আক্তারের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চাই।

প্রত্যক্ষদর্শী করিমের স্ত্রী রাশিদা বেগম জানায়, আমি শামিমদের বাড়ির পেছনে চাতালে ধান শুকাতে ছিলাম। খবর পেয়ে ঘরে ঢুকে দেখি ঘরের দরজা দুটোই খোলা কিন্তু সোনিয়ার গলায় ওড়না পেচানো অবস্থায় ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে আছে। আমার চিৎকার করলেই শামিমের মা আর বোন ঘরে ঢুকে তড়িঘড়ি করে সোনিয়াকে ওড়ানা কেটে নামায়।

মুকসুদপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা একটা অপমৃত্যুর খবর পাই। এই বিষয়ে মুকসুদপুর থানায় একটা অপমৃত্য মামলা দায়ের করা হয়েছে যার মামলা নং ২১। পরে এসআই গোলাম কিবরিয়াকে তদন্তের দায়িত্ব দিলে তিনি লাশের সুরৎহাল প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরে আইনানুগ ব্যবাস্থা গ্রহণ করা হবে।