Current Date:Sep 28, 2024

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কায় সতর্ক সিরিয়ার সরকারি বাহিনী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিরিয়ার পূর্ব ঘৌটার দৌমা শহরে আসাদ বাহিনীর রাসায়নিক হামলার জবাবে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এমন আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনী। এর আগে শনিবারের ওই রাসায়নিক হামলাকে নৃশংস ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করে এর প্রতিক্রিয়ায় শক্তি প্রয়োগের অঙ্গীকার করেন ট্রাম্প। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

ট্রাম্প প্রশাসনের এমন অবস্থানের সমালোচনা করেছে আসাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাশিয়া ও ইরান। দেশ দুইটি বলছে, সিরিয়ায় হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হবে। বিনা জবাবে তারা পার পাবে না।

ট্রাম্পের শক্তি প্রয়োগের ঘোষণার পর মঙ্গলবার সিরিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থাপনায় সতর্ক অবস্থান নেয় আসাদ বাহিনীর সদস্যরা। সামরিক ঘাঁটিগুলোতে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মিত্র দেশকে সঙ্গে নিয়ে আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে চান।

আল মাসদার নামের সিরিয়ার আসাদপন্থী একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সাইপ্রাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধজাহাজ সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ খবরে কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার নৌবহরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি মিসাইল ডেস্ট্রয়ারও সিরিয়ার উপকূলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে রুশ পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ভ্লাদিমির শ্যামানভ বলেছেন, সিরিয়ায় সাম্প্রতিক রাসায়নিক হামলার অভিযোগে আমেরিকা কোনও বেআইনি পদক্ষেপ নিলে তার জবাব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি সচেতনভাবে বলছে যে, প্রয়োজনে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিক পদক্ষেপ নেয়া হবে। কোনও বেআইনি পদক্ষেপ বিনা জবাবে পার পাবে না।’

এর আগে গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিদ্রোহী অধ্যুষিত দৌমায় রাসায়নিক হামলা চালায় আসাদ বাহিনী। উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে এ হামলায় অন্তত ৮৫ জন নিহতের খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস হামলায় তারা নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হোয়াইট হেলমেট। বিষাক্ত গ্যাস হামলায় প্রাণহানির মুখে দৌমা শহর ছাড়তে রাজি হয়েছে আসাদবিরোধী বিদ্রোহীরা।

সরকারি বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ একটি শহরে বিষাক্ত গ্যাস হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র মানুষষের ওপর এমন হত্যাযজ্ঞে স্তম্ভিত করে দিয়েছে বিশ্বের বিবেকবান মানুষদের। নিন্দা, প্রতিবাদের ঝড় উঠে দুনিয়ার নানা প্রান্তে। তবে বরাবরের মতোই নিজেদের বিরুদ্ধে উঠা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে আসাদ বাহিনী। এ রাসায়নিক হামলার ঘটনায় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রিসভা এবং সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তিনি ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

টুইটারে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘সিরিয়ায় অমানবিক রাসায়নিক হামলায় নারী ও শিশুসহ বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। সিরীয় সেনাবাহিনীর হাত অবরুদ্ধ এলাকায় এই নৃশংসতা চালানো হয়েছে। ফলে বাইরের দুনিয়ার সেখানে প্রবেশের কোনও সুযোগ নেই।’

ট্রাম্প বলেন, ‘জন্তু আসাদকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য দায়ী হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন, রাশিয়া ও ইরান। চড়া মূল্য দিতে হবে।’

সিরিয়া ইস্যুতে অধিক গুরুত্ব দিতে পেরুতে অনুষ্ঠিতব্য লাতিন আমেরিকা সম্মেলনেও অংশ নিচ্ছেন না ট্রাম্প। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ মুহূর্তে সিরিয়া ইস্যুতে গভীর মনোযোগ দিতে লাতিন আমেরিকা সম্মেলনে যাচ্ছেন না প্রেসিডেন্ট।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আসাদ বাহিনীর রাসায়নিক হামলার নিন্দা জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। হামলার তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ যুক্তরাজ্য। এ ঘটনায় আসাদ সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানিয়েছে আঙ্কারা। পশ্চিমা দুনিয়াকে এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান।

উল্লেখ্য, পূর্ব ঘৌটায় ২০১১ সালে প্রথম সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে এটাই ছিল বিদ্রোহীদের সর্বশেষ ঘাঁটি। গত এক মাসের লাগাতার হামলার পর সেখান থেকে পালানো শুরু করে বিদ্রোহীরা। ১৮ ফেব্রুয়ারি আক্রমণ শুরু করা আসাদ বাহিনী এলাকাটিতে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ প্রচেষ্টাকে তিন অংশে বিভক্ত করে দেয়। তাদের হামলায় তখন প্রায় ১ হাজার ৬০০ মানুষ নিহত হন। সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি।

Share