Current Date:Sep 29, 2024

যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে যুক্তরাষ্ট্রে

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি : যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের গ্রেফতার অভিযান চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। বুধবার পর্যন্ত ৩ দিনের এক অভিযানে ৩৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এর এজেন্টরা। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলবদর আশরাফুজ্জামান খান এবং রাজাকার জব্বার ইঞ্জিনিয়ার কিংবা বঙ্গবন্ধুর ঘাতক হিসেবে দণ্ডিত রাশেদ আহমেদ ও মুসলেম উদ্দিন নেই। এরা চার জনই ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা এবং নিউইয়র্কে বসবাস করছে বলে জানা গেছে।

এখনও বিচারে দণ্ডিত হয়নি কিংবা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠিত হয়নি-এমন শতাধিক আল বদর, শান্তি কমিটির সদস্য ভিন্ন পরিচয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসতি গড়েছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে অনেকেই রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের পর নাগরিকত্বও পেয়েছে।

আটলান্টা, বাল্টিমোর, বস্টন, শিকাগো, ডেনভার, ডেট্রয়েট, হিউস্টন, লস এঞ্জেলেস, মায়ামি, নিউ অর্লিন্স, নিউইয়র্ক সিটি, ফিলাডেলফিয়া, ফিনিক্স, সিয়াটল, সানফ্রান্সিসকো এবং সেন্ট পোল সিটিতে অবস্থিত ফিল্ড অফিসের সহায়তায় এ অভিযান চালানো হয়। আইসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্রেফতারকৃতদেরকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

অপারেশন নো সেইফ হ্যাভেন ফোর নামক এ অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের অন্তত: ৮ জন যুক্তরাষ্ট্রেও গুরুতর অপরাধে সাজা ভোগ করেছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এমন আরেকটি অভিযান চালানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

এ প্রসঙ্গে আইসের উপ-পরিচালক টমাস ডি হোম্যান বলেন, নিজ দেশে গুরুতর অপরাধ করে যুক্তরাষ্ট্রকে যারা নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করেছে, সেটি নিতান্তই ভুল। কারণ, এমন অপরাধীদের কখনো ঠাঁই দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। এমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে, এজন্যে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে, নিজ দেশে দণ্ডিত হবার নথিসহ তাদের যাবতীয় তথ্য, ছবি এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের ঠিকানা ( সম্ভব হলে) দরকার। টেলিফোন, ই-মেইল পেলেও শনাক্ত করা সহজ হয়।

আইস জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে চায়নিজ-৪, সেন্ট্রাল আমেরিকার সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং সেনাবাহিনীর সদস্য, মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা, পূর্ব আফ্রিকার এক নেতাও রয়েছেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধ করে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে এসে নাম-পরিচয় গোপন করে অথবা অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার তথ্য গোপন করে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া কিংবা নাগরিকত্ব গ্রহণকারীরাও এ অভিযানের আওতায় রয়েছে। দমন-পীড়ন, যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, অকথ্য নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি অপরাধে জড়িতদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলেও জানায় আইস। এ ব্যাপারে তথ্য জানানো যাবে ১-৮৬৬-৩৪৭-২৪২৩ অথবা ইন্টারন্যাশনাল ০০১-১৮০২-৮৭২-৬১৯৯ নম্বরে ফোন করে। তথ্য প্রদানকারির নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয় সব সময়। ই-মেইলেও অপরাধীদের তথ্য দেয়া যাবে hrv.ice@ice.dhs.gov । এমনকি আইসের অনলাইনে টিপ (tip) ফরম পূরণের মাধ্যমেও বিস্তারিত তথ্য জানানো যাবে।

জানা গেছে, হিউম্যান রাইটস ভায়োলেটর্স এ্যান্ড ওয়ারক্রাইমস সেন্টার খোলা হয়েছে ২০০৯ সালে। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া অথবা পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী, খুনী, বর্বরতার জন্যে অভিযুক্ত ব্যক্তি, গণহত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সন্ধান ও গ্রেফতার করে এই সেন্টার। আর এ সেন্টারে কাজ করছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন সদস্য, আইনজীবী, গোয়েন্দা সদস্য, গবেষণায় পারদর্শী, ইতিহাসবিদ এবং বিশ্লেষণকারিরা।

আইস আরো জানায়, ২০০৩ সাল থেকে এ ধরনের অপরাধে লিপ্ত ৩৯৫ বিদেশীকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময়ে আরো ৮৩৫ জনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত থাকার তথ্য উদঘাটিত হবার পর। এছাড়া আরো ১২২ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের অনুরোধে।

জানা গেছে, বিভিন্ন দেশের অনুরোধে এখনো ১৩০ জনকে খোঁজা হচ্ছে। এরা মানবতাবিরোধী অপরাধে, যুদ্ধাপরাধে, বিচার বহির্ভূত হত্যাযজ্ঞে, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, জোরপূর্বক লিঙ্গ পরিবর্তনের মতো অমানবিক অপরাধে লিপ্ত ছিল। ৯৫টি দেশ থেকে আরো ১৭৫০ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

২০০৩ সাল থেকে সর্বমোট ৭৪ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছিল ১১০ দেশ থেকে। এরমধ্যে ২৩৪ জনকে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তেই আটকে দেয়া হয়।

Share