Current Date:Oct 6, 2024

সংসদে এমপিদের কাটগড়ায় অর্থমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট : ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা ও লুটপাট নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন এমপিরা। ব্যাংক লুটকারী ও অর্থপাচারকারীদের ধরতে না পারায় এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে না পারায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা শুরু করেন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি অধ্যাপক আলী আশরাফ। এরপর আলোচনায় তাল মেলান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশিদ ও স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজী।

অধ্যাপক আলী আশরাফ শুরুতে সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বলেন, আমাদের আবাদি জমি কমেছে, কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছে, এটা অভুতপূর্ব সাফল্য। তাছাড়া অবকাঠামো উন্নয়নে অভুতপূর্ব সাফল্য এসেছে। তিনি বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাফল্য হয়েছে, এক্ষেত্রে বিরাট বৈপ্লবিক পরিবর্তনও এসেছে। এছাড়া স্বাস্থ্যখাতে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছি। সাধারন মানুষ আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩২ রকমের ঔষধ ফ্রি পাচ্ছে। এখন আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু শৈথিল্য আছে। সেগুলো দূর করতে হবে।

ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা আনা দরকার। এই খাতে শৃঙ্খলা আনতে না পারলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। কিছু মানুষ ব্যাংকিং খাতে লুটপাট করবে, এটা হতে পারে না। ঋণ খেলাপি হবে, অর্থ পাচার করবে এই ঋণ খেলাপি অর্থ পাচারকারীদের আপনি ধরেন। করের আওতা বাড়াতে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কর অফিস করেন। বিমান চলছে না, বিদেশিরা এসে বিমানে উঠলে মনে করে যে কোনো সময় ভেঙে পড়বে। সর্বত্র ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা চলছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ব্যাংকিং খাতে যে লুটপাট হয়েছে তা ভারতের সমনাথ মন্দিরের লুটপাটের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তখন সমনাথ মন্দির আক্রমণ করে ২০ বিলিয়ন ডলার লুটপাট করা হয়েছিল। আর বাংলাদেশে ব্যাংক লুটপাটের আগ পর্যন্ত এতো বড় লুটপাটের ঘটনা আর ঘটেনি। সামনে নির্বাচন, নির্বাচনের আগে এই ব্যাংক মালিকরা লুটপাটকারী দেশে থাকবে না, তাদের খুঁজেও পাবেন না। তারা বিদেশে পালিয়ে যাবে, ইতোমধ্যে ভিসা লাগিয়ে ফেলেছে।

অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ব্যাংক খেলাপি কারা? এটা কি আপনি জানেন না? কেনো তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন না। এরা ২৪ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এই সমস্ত ভুয়া বাজেট দিয়ে কাজ হবে না। এই বাজেটের মধ্যে কিছু নেই। ধনিকে খুশি, গরীবকে নি:স্ব আর ব্যাংক ডাকাতদের উৎসাহিত করেছেন এই বাজেটে।

স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ব্যাংকের টাকা রাখলে পাচার হয়ে যায় মানুষ এই আতঙ্কে আছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণ খেলাপিরা টাকা দেশেও রাখে না, বিদেশে পাচার করে। এরা ব্যাংকের কিছু আর রাখবে না। যারা ব্যাংকে লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। লুটপাটকারীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার জন্য কি করা যেতে পারে সেটা অর্থমন্ত্রীকে ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে এই টাকা আদায়ে কি করা যায় করেন তাহলে জনগন আস্থা ফিরে পাবে। প্রশাসনে চলছে অনিয়ম বেতন বাড়ানো হলো তারপরেও কর্মকর্তারা ঘুষ খায়। তারা বেতন নিলে ঘুষ বন্ধ করতে হবে। আর ঘুষ নিলে বেতন বন্ধ করতে হবে। এক সাথে দুটো চলবে না।

সরকারদলীয় সদস্য সোহরাব উদ্দিন কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সৃষ্টির দাবি করে বলেন, এ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। যদি এটি সাদা করার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলেও জানান তিনি। এরপর একে একে জাতীয় পার্টির নরুল ইসলাম ওমর, পীর ফজলুর রহমানসহ অন্যান্য এমপিরা তাদের বক্তব্যে ব্যাংকিং খাতের অবস্থাপণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে লুটপাটকারীদের ধরে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

Share