Current Date:Nov 28, 2024

সিনহা হত্যায় প্রদীপ ও লিয়াকতের ফাঁসির আদেশ

জেলা প্রতিনিধি:

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততা প্রমাণ পাওয়ায় বিতর্কিত ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে ৩০০ পৃষ্ঠার রায় পাঠ কালে তাদের দুজনের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে এজলাসে এসে আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর মামলা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করেন বিচারক। এরপর শুরু করেন অপরাধের পর্যবেক্ষণ বয়ান। সাক্ষ্য প্রমাণে কার কী অপরাধ দাঁড়িয়েছে সেসব তুলে ধরার পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অপরাধ অনুসারে সাজা ঘোষণা কালে প্রধান দুই অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এমনটি জানিয়েছে বিচার সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এর আগে সকালে আদালতে হাজির করা হয় মামলায় অভিযুক্ত বিতর্কিত ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার ও লিয়াকতসহ ১৫ আসামিকে।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি, বাদী পক্ষের আইনজীবী ও আসামি পক্ষের কৌঁসুলিসহ বাদী ও বিবাদীদের স্বজন এবং সংশ্লিষ্টরা এজলাসে উপস্থিত রয়েছেন। রায়কে কেন্দ্র করে আদালতের চারপাশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

নির্মম ও আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ১৮ মাসের মাথায় রায় ঘোষণা হচ্ছে এ মামলার। বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে শেষ হয়েছে মামলাটির পরবর্তী কাজ।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৃষ্টির ৩৮ বছরের ইতিহাসে এ প্রথম এত দ্রুত কোনো হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হচ্ছে। এর আগে হত্যা কিংবা ফৌজদারি কোনো মামলায় এত বিপুল সংখ্যক সাক্ষী নেওয়ার নজির নেই। তেমনটি নজির নেই এত স্বল্প সময়ে চার্জগঠন, শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের।

সিনহা হত্যা মামলার রায়ের আগেই সবকিছুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই পুরো আদালত পাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালত পাড়ার চারপাশে ও পয়েন্টে পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে নিরাপত্তাকর্মী। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা বিভাগের লোকজন কয়েক স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৃষ্টির ৩৮ বছরের ইতিহাসে এ প্রথম এত দ্রুত কোনো হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হচ্ছে। এ মামলায় ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এর আগে হত্যা কিংবা ফৌজদারি কোনো মামলায় এত বিপুল সংখ্যক সাক্ষী নেওয়ার নজির নেই। তেমনটি নজির নেই এত স্বল্প সময়ে চার্জগঠন, শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের। মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে আমরা এ মামলার সব বিচারিক কার্যক্রম শেষ করতে সক্ষম হয়েছি। তেমনি সক্ষম হয়েছি সিনহা হত্যার বিষয়টি প্রমাণে। আমাদের আশা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবেন ওসি প্রদীপ ও অভিযুক্তরা।

স্বল্প সময়ে সিনহা হত্যার রায় দেশে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন সরকারি এ আইনজীবী।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা।

হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত। কক্সবাজারের র‌্যাব-১৫ মামলাটির তদন্তভার পায়।

ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাতজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর ২০২১ সালের ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসেন।

 

Share