সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটে জোটসঙ্গী জামায়াতকে বাগে আনতে পারেনি বিএনপি। ২০১৩ সালে জয়ী বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ করে প্রার্থী হিসেবে রয়ে গেছেন জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। ফলে সেখানে আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের পাশাপাশি এই নির্বাচনে দৃষ্টি থাকবে বিএনপি আর জামায়াতের লড়াই নিয়ে।
আগামী ৩০ জুলাই যে তিন মহানগরে ভোট হতে যাচ্ছে তার মধ্যে সিলেট নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা তৈরি হয় জামায়াতের মেয়র পদে প্রার্থী দেয়া নিয়ে। এর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দিলেও জামায়াত তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তবে সিলেটে এমনটা হবে না, সেটা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল দলটি।
এ বিষয়ে এমনকি লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের অনুরোধ উপেক্ষা করেছে জামায়াত। ৪ জুলাই ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে অন্য শরিকদের পরামর্শও পায়ে ঠেলেছে তারা।
তবে ওই বৈঠক শেষে ২০ দলের মুখপাত্র নজরুল ইসলাম খান জানিয়েছিলেন, তিন মহানগরেই ২০ দলের একক প্রার্থী থাকবে। আর এ জন্য ৯ জুলাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনের দিকে নজর রাখার কথা বলেন নজরুল।
সোমবার ছিল সেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। দৃষ্টি ছিল সিলেটে ২০ দলের একক প্রার্থী হলে কে সরে দাঁড়াবেন? আরিফুল নাকি জুবায়ের?
তবে প্রত্যাহারে রাজি হননি কেউ। ফলে আলোচিত কোনো নির্বাচনে ১০ বছর পর আবার পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং আরও একটি-দুইটি জেলার চার থেকে পাঁচটি আসনে বিএনপি ও জামায়াতের লড়াই হয়েছিল। এর আগে ২০০১ সালে চট্টগ্রামের একটি আসনে লড়াই করেছে দুই দল।
এগুলো বাদ দিলে ১৯৯৯ সালে জোটবদ্ধ হওয়ার পর ২০০১ এবং ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন এবং ২০১৩ সালের আট সিটি করপোরেশন, ২০১৫ সালের তিন সিটি করপোরেশন এবং ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ এবং চলতি বছর কুমিল্লা, রংপুর, গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল সিটি সিটি নির্বাচনে একাট্টা হয়েই আওয়ামী লীগের মোকাবেলা করছে বিএনপি-জামায়াত।
এর মধ্যে সিলেট নিয়ে এই বিভেদের ফল অন্য দুই মহানগরে পড়ে কি না, সেটির দিকে এখন নজর থাকবে রাজনৈতিক সচেতনদের মধ্যে।
সিলেটে মেয়র পদে এখন যেসব প্রার্থী রয়ে গেছেন তারা হলেন: আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী, ‘স্বতন্ত্র’ হিসেবে জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএনপির বিদ্রোহী বদরুজ্জামান সেলিম, সিপিবি-বাসদের আবু জাফর ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মোয়াজ্জেম হোসেন ও স্বতন্ত্র এহসানুল হক তাহের।
বারবার ভোটে জেতা কামরানকে ২০১৩ সালে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিলেন আরিফুল। তবে এবার জোটসঙ্গী জামায়াতের বিরোধিতার পাশাপাশি নিজ দলের মধ্যেও বিদ্রোহের মুখেমুখি হতে হয়েছে তাকে। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও তার পথের কাঁটা হয় কি না, সেটাও ভাবতে হবে।
সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে চারজন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলে করেন বলে জানিয়েছেন রিটানিং কর্মকর্তা মো. আলিমুজ্জামান। এর আগে রবিবার দুইজন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।
ফলে মেয়র পদে সাতজন ছাড়াও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১২৭ এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬২ জন প্রার্থী রয়ে গেলেন ভোটে।
কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন প্রত্যাহারকারীরা হলেন: ৮নং ওয়ার্ডেরর্থী সিরাজ খান, ১৪নং ওয়ার্ডের সিরাজুল ইসলাম শামীম, ২০নং ওয়ার্ডের মিঠু তালুকদার, ২১নং ওয়ার্ডের এনামুল হক, ২৬নং ওয়ার্ডের খসরু আহমদ ও ২৫নং ওয়ার্ডের মো. আব্দাল উদ্দিন।
২০নং ওয়ার্ডে দুই প্রার্থীর মধ্যে মিঠু তালুকদার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় সাবেক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।
মঙ্গলবার প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। এরপর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার।