Current Date:Nov 28, 2024

স্বপ্নের শিরোপা থেকে দুই ধাপ দূরে ফ্রান্স

স্পোর্টস ডেস্ক: এবারের বিশ্বকাপে ইতিহাস বলে কিছু নেই। আগের ইতিহাস কী বলে, তা দেখার যেন সময় নেই। অন্তত তা ফ্রান্সের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে। না হলে বিশ্বকাপের মূলমঞ্চে ফ্রান্সের সঙ্গে পরাজয়ের রেকর্ড ছিল না আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের। কিন্তু ম্যাচ শেষে দেখা গেলো তৃপ্তির ঢেঁকুর তাদের। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের চোখে কান্না।

বিশ্বকাপ শুরুর আগ থেকেই ফ্রান্সকে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার বলা হয়েছিল। কেন তাদের দাবিদার আখ্যা দিয়েছিল ফুটবল বিশ্লেষকরা তা ম্যাচ বাই ম্যাচ প্রমাণ করছে লা ব্লুজরা। আজকের ম্যাচ শুরুর আগেই বলা হচ্ছিল, এ ম্যাচটি হবে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের লড়াই। শেষ পর্যন্ত তারুণ্যে গড়া দল অভিজ্ঞদের বিদায় করে দিলো কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে।

এ বিদায়ের ফলে উরুগুয়ের বিশ্বকাপ জয়ের আক্ষেপ বেড়ে দাঁড়ালো আরও চার বছর অর্থাৎ ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে যখন উরুগুয়ে শিরোপার জন্য নামবে তখন তাদের শিরোপা খরা গিয়ে দাঁড়াবে ৭২ বছরে। উরুগুয়ে সবশেষ ১৯৫০ সালে বিশ্বকাপ শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলেছিল। অন্যদিকে তারুণ্য নির্ভর ফ্রান্স ১৯৯৮’র পর শিরোপা পুনরুদ্ধারে দুই ম্যাচ থেকে দূরে অবস্থান করছে।

অথচ ম্যাচ শুরুর আগে বিশ্বকাপে উরুগুয়ে ও ফ্রান্সের রেকর্ড ছিল ৮ ম্যাচের মধ্যে উরুগুয়ের জয় তিনটি এবং ফ্রান্সের জয় ১টি। বাকি চারটি ম্যাচ ড্র হয়। আর বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে এবারের ম্যাচটি নিয়ে মোট চারবার মুখোমুখি হয় উভয় দল। প্রথম দেখায় ১৯৬৬ সালে উরুগুয়ে জয়লাভ করে। ২০০২ ও ২০১০ বিশ্বকাপের ম্যাচটি ড্র হয়। আর ২০১৮ শেষ দেখায় উরুগুয়েকে পরাজয়ের স্বাদ দেয় ফ্রান্স।

বিশ্বকাপে শেষ যে ৬টি কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে উরুগুয়ে, তার মধ্যে কেবল একবার সেমিফাইনালে যেতে পারেনি। সেটি ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পশ্চিম জার্মানির কাছে হারে। আর এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিদায় নিল ল্যাটিন আমেরিকার দলটি। চোটের কারণে এই ম্যাচে এডিনসন কাভানি খেলেননি। তার জায়গায় লুইস সুয়ারেজের সাথে আক্রমণে লড়েছেন ক্রিশ্চিয়ান স্তুয়ানি। কিন্তু এ দুয়ের সমীকরণে তেমন টুইস্ট ছিল না।

নিঝনি নোভগোরদে ম্যাচের শুরুর থেকেই আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ। ম্যাচের ৫ মিনিটেই ভালো একটি সুযোগ তৈরি করেছিল উরুগুয়ে। লুইস সুয়ারেজের পাস থেকে বক্সের মধ্যে বল পেয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ান স্টুয়ানি। ব্যর্থ হন এডিনসন কাভানির বদলে আসা এই স্ট্রাইকার। সপ্তম মিনিটে ফ্রান্সের লুকাস হার্নান্দেজের বক্সের বাইরে থেকে নেয়া বাঁ পায়ের শটও পোস্টের বাম দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়।

১৪ মিনিটে ম্যাচের প্রথম কর্নার। ফ্রান্সের পেনাল্টি বক্সের মধ্যে পাঠালেন তরেইরা। দিয়েগো গোডিন গোলমুখের কাছ থেকে চেষ্টা করলেন। গোলকিপার হুগো লরিস নিচ ডাইভে বল ক্লিয়ার করেছেন। আবার দুই মিনিট পরই জিরুডের তুলে দেয়া বলকে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে হেডে বারের উপর দিয়ে পাঠিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিপক্ষের ম্যাচের সেনসেশন কিলিয়ান এমবাপে। প্রথম আধঘণ্টায় অবশ্য উরুগুয়ের কিপার ফার্নান্দো মুসলেরাকে প্রবল হুমকির মধ্যে পড়তে হয়নি।

৩৯ মিনিটে সবচেয়ে বড় ভুলটি করে বসে উরুগুয়ে। কোরেন্তিন তোলিসোকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন রদ্রিগো বেন্তাঙ্কুর। ফ্রি-কিক পায় ফান্স। গ্রিজম্যানের দুর্দান্ত সেট পিস থেকে বল পেয়ে বক্সের মধ্যে মাথা ছুঁইয়ে দেন রাফায়েল ভারানে। পোস্টের বাঁ কোনা দিয়ে বল ঢুকে যায় জালে (১-০)।

৪৩ মিনিটে গোল শোধ করার খুব কাছেই চলে এসেছিল উরুগুয়ে। লুকাস তোরেইয়ার কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ একটি হেড করেছিলেন মার্টিন ক্যাসেরাস, ফ্রান্স গোলরক্ষক লসির সেটা ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন অসাধারণ দক্ষতায়। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে ফ্রান্স।

দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধে মরিয়া হয়ে লড়েছে উরুগুয়ে। কিন্তু উল্টো বল দখল নিয়ে একের পর এক আক্রমণে যায় ফরাসিরা। সেই আক্রমণেই দ্বিতীয় গোলটি পায় ফরাসিরা। ম্যাচের ৬১তম মিনিটে গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরার শিশুসুলভ ভুলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। বক্সের অনেক বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন গ্রিজম্যান, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড নিজেও হয়তো বেশি কিছু ভাবেননি। সেই শটটি সরাসরি উরুগুয়ে গোলরক্ষকের হাতে পড়েছিল। অপ্রত্যাশিতভাবে সেটা ফসকে গিয়ে পার হয়ে যায় গোললাইন (২-০)।

শুরু থেকে অনুজ্জ্বল এমবাপেই একটু পর ‘অভিনয়’ করে উত্তেজনা ছড়ান দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে। রদ্রিগেজের হালকা ছোঁয়ায় মাটিয়ে পড়ে গিয়ে গড়াগড়ি খান পিএসজির এই ফরোয়ার্ড। এই ঘটনায় দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে হাতাহাতিও হয়ে যায়। পরে এমবাপে ও রদ্রিগেজকে হলুদ কার্ড দেখা রেফারি।

বাকি সময়ে কোনও দলই আর ভালো কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। কাভানি না থাকায় এদিন সুয়ারেজের দিকে চেয়ে ছিল উরুগুয়ে। কিন্তু দাবি মেটাতে পারেননি বার্সেলোনা স্ট্রাইকার। কোয়ার্টার ফাইনালেই তাই থেমে গেল তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা।

এদিন বল দখলের লড়াইয়ে উরুগুয়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল ফ্রান্স। তবে, বল দখলের লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকলেও উরুগুয়ে বারবার আক্রমণে গিয়েছে। কিন্তু ভাগ্য হয়তো তাদের সহায় ছিল না। ম্যাচে ৬১ শতাংশ সময় ধরে বল দখলে রেখেছিল ফ্রান্স। আর ৩৯ শতাংশ সময় ধরে বল দখলে রেখেছিল উরুগেুয়ে। ফ্রান্স লক্ষ্যে শট নিয়েছে দুটি। উরুগুয়ে লক্ষ্যে শট নিয়েছে চারটি।

দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল ও বেলজিয়ামের মধ্যকার জয়ী দলের বিপক্ষে সেমিফাইনালে খেলবে ফ্রান্স।

Share