Current Date:Nov 28, 2024

ছাত্রলীগ কসাইয়ে পরিণত হয়েছে : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নিষ্ঠুর ও বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে ছাত্রলীগ। গত দুদিন আগে রাতে ঢাবির হলে হলে ঢুকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেছে বেছে নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ।

গত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগদানকারী ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে হল ছাত্রলীগের নেত্রীরা। এতে কমপক্ষে ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে মোর্শেদা নামের এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

রিজভী বলেন, এই ঘটনার সাথে ছাত্রলীগ হল শাখার সভানেত্রী এই ঘটনার সাথে জড়িত। আসলে বই-খাতা-কলম ছুঁড়ে ফেলে ছাত্রলীগ যে ক্রমান্বয়ে কসাইয়ে পরিণত হয়েছে তার প্রমাণ এই রক্তাক্ত ঘটনা। আজ বুধবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, আওয়ামী কেন্দ্রীয় নেতারা ছাত্রলীগকে পানির বদলে রক্তপান করার পরামর্শ দিচ্ছে বলেই এতো সহিংস রক্তপাত শিক্ষাঙ্গণে আওয়ামী নেতৃত্ব কী পরিমাণ আশকারা দিলে ছাত্রলীগ এমন পৈশাচিক বেপরোয়া হয়ে পড়ে তারই চিত্র আমরা কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটতে দেখছি।

তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ঘনঘন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পদচারণা করছেন তাতে আমরা কোনো প্রতিকার দেখছি না, বরং সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও চাকুরি প্রার্থীদের আন্দোলনের ওপর রক্তাক্ত আক্রমণেরই ধারাবাহিক সহিংস ঘটনা দেশবাসী লক্ষ্য করছে। ধিক্কার জানাই এ ধরনের ঘটনার।

তিনি বলেন, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মনে হয় ছাত্রলীগের ছাড়পত্র ব্যতিরেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিক্ষালাভ, প্রতিবাদ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারবে না। সরকারের মন্ত্রীদের লাগামহীন বক্তব্যের কারণে শিক্ষার্থীরা আরো বেশি ক্ষুব্ধ বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় বিশ^বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সরকারের তল্পিবাহক ছাড়া কোনো আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেননি। সরকারের কাছে নিজেদের বিবেককে অঞ্জলি দিয়েছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের যে তান্ডবলীলা চলছে সেটির তীব্র ধিক্কার ও নিন্দা জানাই।

রিজভী বলেন, শিক্ষা বিনাশী সরকার আওয়ামী মহাজোট সরকার মেধাবী লোক পছন্দ করে না। এই কারণেই এদের সময় সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়, খাতায় কিছু না লিখেও ‘এ’ প্লাস পাওয়া যায়। এরা ক্ষমতায় আসার পর দেশের শিক্ষাঙ্গণ দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এজন্য ছাত্রলীগ ভর্তি বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ইত্যাদিতে রমরমা বানিজ্য অব্যাহত রেখেছে। আর এগুলো জারি রেখেই শেখ হাসিনা জনগণকে চোখ রাঙানি দিয়ে অপশাসনের পৌষ মাস চালিয়ে যাচ্ছে। আসলে প্রধানমন্ত্রীর চোখে চিরকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকার স্বপ্ন।

খালেদা জিয়ার চিকিতসা প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে অশুভ চক্রান্ত হচ্ছে কি না এ প্রশ্ন এখন দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশে^ এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, যারা দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে নিজের দেশের স্বার্থের পক্ষে অবিরাম সংগ্রাম করেছেন তাদের মতো তাকেও নানা কায়দায় এক শোচণীয় পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কী না সে বিষয়ে চারিদিকে জমাট সন্দেহ প্রকট আকার ধারণ করেছে।

তিনি বলেন, জাল নথি তৈরির মাধ্যমে মিথ্যা সাজানো মামলায় সরকারি হুকুমে বেগম জিয়াকে সাজা দিয়ে কারবন্দী করে রাখা হয়েছে। কারাগারে তাকে ন্যূনতম সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তাকে একটি সূর্যালোকহীন, নির্জন, স্যাঁতস্যাঁতে পুরোনো ও বসবাস অযোগ্য ভবন-যা বহুদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণহীন ও সাধারণ কয়েদিদের জন্যও বাসযোগ্য ছিল না, সেখানেই বিএনপি চেয়ারপারসনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি যেন মধ্যযুগীয় কায়দায় বন্দি নির্যাতনের শামিল। ডিভিশন দেওয়া হলেও তার বিছানা বালিশ ও আসবাবও অত্যন্ত নি¤œমানের ও ব্যবহার অযোগ্য। এটাও এক প্রকার বর্বর নির্যাতন।

রিজভী বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুচিকিৎসা নিয়ে সরকারের তামাশা আর টালবাহানা জাতি দেখেছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, এই পরিবেশে একজন সুস্থ মানুষেরও নানা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে তার আগে থেকে তিনি যতটুকু অসুস্থ ছিলেন সেটিসহ আরও নানা ব্যাধির তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে।

একজন বর্ষিয়াণ নারীর এই নির্জন মানবেতর কারাবাস স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে তা সাধারণ মানুষকেও গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। এই পিচ্ছিল স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে যে কোনো সময়ে পড়ে গিয়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্জন, নিঃসঙ্গ, নিরাপত্তাহীন পরিবেশের কারণে নিদ্রাহীনতা, উদ্বেগ, বিষন্নতা সহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকে।

তিনি বলেন, গতকাল বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় গঠিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার সদস্যের সরকারি মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শামছুজ্জামান বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার রক্ত পরীক্ষা ও এক্সরে রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। তার এক্স-রে রিপোর্টগুলোতে দেখা যাচ্ছে ঘাড়ে ও কোমরের হাড়ে সমস্যা আছে। তার ফিজিওথেরাপীর প্রয়োজন। তার দুটো হাঁটুই প্রতিস্থাপন করা। সেই জায়গাতেও কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।

রিজভী বলেন, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে বেগম খালেদা জিয়াকে যে এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে তা মামুলি ব্যাপার মাত্র, তাকে এমআরআইসহ আরো আধুনিক পরীক্ষা করলে বোঝা যেত তার প্রকৃত স্বাস্থ্যগত অবস্থা কি।

এ অবস্থায় একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতার ওপর এহেন নির্যাতন এবং নির্দয় ব্যবহার শুধু সরকার প্রধানের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা ছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই। কারণ জামিন পাওয়ার পরও তার জামিন আটকে দেওয়া হয়েছে সরকার প্রধানের নির্দেশেই।

কিন্তু আইনগতভাবে তিনি ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সেবা পাওয়ার অধিকারী অথচ সে সুযোগ তাকে দেওয়া হচ্ছে না। এখানেই সরকারের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তাকে তিলে তিলে নি:শেষ করার ষড়যন্ত্র রয়েছে। আমি আবারো অবিলম্বে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসী’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

Share