Current Date:Sep 30, 2024

চীন, রাশিয়া, ভারত, জাপানকে পাশে চায় বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চীন, রাশিয়া, ভারত ও জাপানের কাছ থেকে বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূমিকা পালনের আশা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার গণভবনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি গুস্তাবো আদোলফো মেসা কুয়াদ্রা ভেলাসকাসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, লাওসসহ মিয়ানমারের প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ইহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উপর জোরালো চাপ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার যে চুক্তি করেছে সে অনুযায়ী মিয়ানমারের কাজ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা ও সাহায্য সম্প্রসারণ করায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসাও করেন তিনি।
গত বছরের অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযান শুরুর পর বাংলাদেশের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এ পর্যন্ত ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দিয়ে তাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ সরকার।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে মিয়ানমারের সৈন্যদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে হত্যা, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠে আসে। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা একে জাতিগত দমন অভিযান হিসেবে বর্ণনা করেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে মিয়ানমার সরকার এই শরণার্থীদের ফেরত নিতে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও তাতে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই।
শরণার্থী প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে আসেন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি কেলি কারি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে মানবিক দিক থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য নতুন একটি স্টান্ডার্ড তৈরি করে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে বলে জানান চীনের প্রতিনিধি য়ু হাইতাও।
রাশিয়ার প্রতিনিধি দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে বাংলাদেশকে সমর্থন সম্প্রসারণের আশ্বাস দেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ সংঘাত চায় না এবং এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফর এবং মিয়ারমানের সমাজ কল্যাণমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হতে হবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয়রা ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং পরিবেশ ও বনভূমিরও ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
এ ছাড়া বর্ষায় রোহিঙ্গাদেরও দুর্দশা বাড়ার আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকসহ আরও অনেকে।

Share