Current Date:Oct 4, 2024

মিয়ানমারের ক্ষমতাশালী জেনারেল মং অয়ে এখন হুইলচেয়ারে সীমাবদ্ধ

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের ভাইস সিনিয়র জেনারেল মং অয়ে একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত যিনি সিনিয়র কমান্ডারদের আনুগত্য উপভোগ করতেন। এখন তার বয়স ৮০ বছর। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সিনিয়র জেনারেল থান শুয়ে-এর পরে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে যিনি পরিচিত ছিলেন। তারপর থেকে, এই ভাইস সিনিয়র জেনারেল জনগণের চোখের আড়ালে চলে যান।

সম্প্রতি কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় যেখানে তাকে পূর্বের সেনাশাসনের সময় থেকে ভিন্ন অবস্থায় দেখা গেছে। একটি ছবি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। যেখানে দেখা যায় সাবেক ভাইস সিনিয়র জেনারেল স্ট্রোকের কারণে একটি হুইল চেয়ারে বসা এবং মায়ানমারের দক্ষিণাঞ্চল শানের বিখ্যাত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মেই ফোন সায়ডাউের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিচ্ছেন।

এই সন্ন্যাসীর আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে বলে মনে করা হয়। তিনি প্রায়ই শান অঞ্চলের গুহায় কয়েক মাসব্যাপী ধ্যানে বসেন বলে জানা যায়।তিনি বহু ব্যবসায়ী এবং জেনারেলদের আশীর্বাদ করে থাকেন।

ভাইস সিনিয়র জেনারেল মং অয়ে ১৯৫৯ সালে পায়েন ওলিউন এর ডিফেন্স সার্ভিস একাডেমি থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের বাগোতে অবস্থিত বিভাগ ৭৭ এর অধিনায়ক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৮ সালে, তিনি পূর্ব অঞ্চলের শান রাজ্যের একটি আঞ্চলিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৯২ ও ১৯৯৩ সালে হঠাৎ দেখা গেলো তিনি ইয়াঙ্গুনের ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চীফ (ডিফেন্স সার্ভিসেস)হয়েছেন।অন্যতম ক্ষমতাধর সেনা গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল খিন নুন্ট এর বিপরীতে ছিলেন। খিন নুন্ট রাজ্য আইন ও আদেশ পুনর্নির্মাণ কাউন্সিল বা এসএলওআরসি হিসাবে পরিচিত ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় অবস্থানে যেতে আগ্রহী ছিলেন।

আঞ্চলিক কমান্ডারগণ যারা এসএলওআরসি এর সদস্য তারাও খিন নুন্টকে সহায়তা করেননি।

মং অয়ে নিজেকে একজন সৈনিক হিসেবে দেখেছেন, রাজনীতিবিদ নয়।

ভাইস সিনিয়র জেনারেল মং অয়েকে মানুষ অতিরিক্ত মদপানকারী, গলফ খেলা প্রতি অতিরিক্ত টান এবং চরম খারাপ আচরণকারী হিসেবে চিনতো।একবার মদ্যপ অবস্থায় কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ)এর পতাকা সরিয়ে দেন যেখানে ১৬ কেএনইউ এর কমান্ডার লে. কর্নেল তামুহে উপস্থিত ছিলেন। পরে তার সৈন্যরা অস্ত্রসহ বার্মিজ সরকারের কাছে আত্নসমর্পণ করেন।

ক্ষমতাসীন কাউন্সিলের শীর্ষে বসা সিনিয়র জেনারেল থিন শুয়ে, খিন নূন্ট ও মং অয়ের মধ্যে সমর্থন নিয়ে জেনারেলদের দ্বন্দ্ব দেখতেন এবং এর থেকে সুবিধা নিতেন।

২০১১ সালে লজ্জাজনক নির্বচনের পর মং অয়ে এবং থান শোয়ে পদত্যাগ করেন। যখন তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি ডেভেলপমেন্ট পার্টি শাসন শুরু করে।

মং অয়ে যখন চুপচাপ অবসর নিয়েছেন তখন এমন গুজব ছড়িয়েছে যে তার বিদায় অনুষ্ঠানের সময়ে তিনি সিনিয়র কর্মীদের বলেন, ক্ষমতা আটকে রেখে “অন্যদের মতো একই ভুল করবেন না”। সেই সময়ে, থিন শুয়ে একটি সুপ্রিম কাউন্সিল গঠনের কথা ভাবছিলেন, তিনি যার চেয়ারম্যান ছিলেন।

মং ওয়ে তার সহকর্মীদের বলেন, ‘আমরা একসময় রাজনীতি ছেড়ে চলে যাব এবং সকলের জন্য।’

থিন শুয়ে, মং ওয়ের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিলেন এবং হঠাৎ করে কাউন্সিলের পরিকল্পনা বাতিল করে দিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে “ক্ষমতার দখলকারী জেনারেল” হিসাবে দেখাতে চাননি। মং অয়ে এরপর থেকেই জনসাধারণের কাছ থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

অন্যান্য জেনারেলদের মতো মং ওয়ে এবং তার পরিবার মায়ানমারের সম্পদশালী পরিবার হিসেবে পরিচিত।

কিন্তু ২০১২ সালে সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, ৭৪ বছর বয়সী মং ওয়ে স্ট্রোকে স্ট্রোক করে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে চলে যায়। পরে তার সম্পর্কে আর কোন সংবাদ ছিল না।

কিন্তু এটা মনে করা হয় যে, থিন শুয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি তার সহকর্মীদের, বিদেশী ব্যবসায়ীদের এবং দাউ আং সান সুও সহ রাজনীতিবিদদের সাথে দেখা করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক মতামত নিয়ে আলোচনা করেছেন।৮০ বছর বয়সী থিন শুয়ে তুলনামূলকভাবে সুস্থ আছেন বলে জানা যায়।

রোহিঙ্গা ইস্যু আইসিসিতে পাঠানোর দাবি

মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর সম্প্রতি পরিচালিত পরিকল্পিত নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ ও পর্যবেক্ষণসহ আনুষ্ঠানিক অভিমত ব্যক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণ মিয়ানমার সেনাবাহিনী পরিচালিত মানবতাবিরোধী ভয়াবহ নৃশংসতা বিষয়ে আইসিসি’র আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনার পাশাপাশি মিয়ানমার ও পশ্রয়দানকারী রাষ্ট্রসমূহের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে বলে মনে করে টিআইবি।

সম্প্রতি আইসিসি’র প্রাক-বিচারিক শুনানিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের আদি নিবাস থেকে নিধন ও নিপীড়নে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস ভূমিকা সম্পর্কে তদন্তের পূর্বে বাংলাদেশের অভিমত জানার সিদ্ধান্ত ও পরবর্তীতে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষণ ও সাক্ষ্য-প্রমাণসহ অভিমত ১১ জুনের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে আইসিসি থেকে চিঠি পাঠানো হয়। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার এখনও এর সুনির্দিষ্ট জবাব প্রদান নিয়ে দোলাচলে রয়েছে।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের উপর অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেয়া দশ লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থীর অভূতপূর্ব এ বোঝা ও দায় মিয়ানমার সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। জাতিগত নিধনের লক্ষ্যে যে পরিচালিত মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতার ব্যাপারে ন্যায়বিচারে আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে আইসিসি’র এ উদ্যোগ। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের দ্ব্যর্থহীন অবস্থান থেকে পুরো প্রক্রিয়াটিকে গতিশীল করে তুলবে। মুক্তিযুদ্ধে ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধের শিকার বাংলাদেশ মানবতাবিরোধী অপরাধের ন্যায়বিচারের দাবিতে সদা সোচ্চার থাকবে, এদেশের জনগণের এই প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব সরকারের।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাথে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার বিরুদ্ধে আইসিসি’তে অভিমত, তথ্য-প্রমাণ সহ মতামত প্রেরণ হবে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এছাড়া আইসিসি’র সদস্য রাষ্ট্র ও রোম সংবিধি অনুমোদনকারী হিসেবে নৈতিকভাবে বাংলাদেশ গণনৃশংসতাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার সপক্ষের অংশ হিসেবে এ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে জানান ড. জামান।

বিবৃতিতে ড. জামান আরো বলেন, এর ফলে একই সঙ্গে জাতিসংঘসহ যে সকল আন্তর্জাতিক মহল নিস্ক্রিয়ভাবে দীর্ঘদিন মিয়ানমার সেনাবাহিনী পরিচালিত জাতিগত নিধনের প্রস্তুতিপর্বে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে তাদেরও জবাবদিহিতার ঐতিহাসিক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

Share