Current Date:Oct 4, 2024

দুই মাদকব্যবসায়ীকে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে দামুড়হুদা থানার ওসি প্রত্যাহার

অনলাইন ডেস্ক : মাদকের স্বর্গরাজ্য খ্যাত চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীসহ দুইজন মাদক মামলার আসামিকে ঘুষের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবার (২৮মে) রাতে তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। এদিকে উক্ত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য গঠিত হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নানা সময়ে গ্রেপ্তার বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। গত শনিবার রাতে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার শীর্ষ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়। সেসময় তাকে ক্রসফায়ারে দেবার আশংকাও ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু গ্রেপ্তারের পরই মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এছাড়া আরও অভিযোগ রয়েছে ওসি আকরাম ওই মাদক ব্যবসায়ীকে এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করেছেন।

এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডমিন) তরিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন-সহকারী পুলিশ সুপার আসহান হাবীব ও ডিআইও ওয়ান গোলাম মোহাম্মদ। তদন্তে উল্লেখিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম দৈনিক আমার সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে বলে কমিটি প্রধান তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা জেলার বিরাট অংশ ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় এখানে মাদকদ্রব্য শুধু সহজলভ্যই নয় বরং এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হয়ে থাকে। সম্প্রতি শুরু হওয়া মাদক বিরোধী অভিযানে জেলার আলমডাঙ্গা থানা ১১৮ জনকে আটক, ৩৯টি মামলা, ১টি ওয়ান শুটারগান আটক ও ১টি ক্রসফায়ার এবং জীবননগর থানা ১১৯ জনকে আটক, ২৬টি মামলা, ১টি ওয়ান শুটারগান আটক এবং ১টি ক্রসফায়ারে দিলেও জেলার মাদকের ঘাটি খ্যাত দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা দেখাতে পারেনি বরং মাদকের আসামী ধরে পরিবারের নিকট ফোন করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ অর্থ উসুল করতে যেয়ে চড়া মূল্যের মাশূল দিলেন ওসি আকরাম হোসেন নিজেই।

ঘটনার নেপথ্যে জানা যায়, দেশে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা ও দর্শনা পৌর এলাকায় আইন শৃঙ্খলার বাহিনী অভিযান শুরু করে। গত শনিবার রাতে দামুড়হুদা মডেল থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে দর্শনা পৌর এলাকার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আবুল হোসেন এর পুত্র কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা ভুক্ত ফেন্সিডিল ও ইয়াবা ট্যাবলেট সরবরাহকারী বা এজেন্ট ঝন্টু মিয়া (৩২) কে আটক করে বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানান। কিন্তু ধরে কোথায় রাখা হয়েছে তা পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানাতে পারেনি। পর দিন এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে ঝন্টু বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। খবর টি কোন কোন ফেসবুক আইডিতে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

এসব খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পুলিশের কাছে ধরনা দেয়। সোমবার সকালের দিকে তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে পুলিশের কথা বলতে দেখেন অনেকেই। কিছুক্ষণ পরেই প্রায় ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে ঝন্টুকে ছেড়ে দেয়া বা পালিয়ে যেতে সহোযোগিতা করা হয়েছে বলে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।

অপরদিকে একইদিন রাতে একই গ্রামের মৃত আ.ওয়াহেদের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী সেলিমকে (৫০) দামুড়হুদা থানা পুলিশ আটক করে। ঐ রাতেই জনৈক দালালের মাধ্যমে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে সেলিমকেও ছেড়ে দেয়া হয় বলে ওসি আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে আরো একটি অভিযোগ। তবে সেলিমের বিষয়টি এখনো ঝন্টুর মত কেন আলোচনায় আসেনি সেটা রজস্যজনক। অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ঝন্টু ও সেলিম এখন সে কোথায় আছে কেমন আছে আদৌও বেচে আছে কি না তাও তার পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানাতে পারেননি।

Share