অনলাইন ডেস্ক : ‘পুলিশে দাবড়ানির পর এহানে কিছু পাইবেন না। জিনিস চাইলে আমার লগে চলেন। এহানে খাওন যাইব না।’ কথাগুলো বলতে বলতে কারওয়ান বাজারের রেললাইন ধরে হাঁটছিলেন মধ্য বয়সী এক ব্যক্তি। তার পিছু নিয়ে কিছুদূর এগিয়ে খুপরি ঘরের পাশে দাঁড়ালাম। এরপর তিনি নিজের লুঙ্গির নিচে থাকা হাফপ্যান্টের পকেট থেকে কাগজে মোড়ানো গাঁজা বের করে দিলেন। এটা না, ‘বাবা’ চাই বলতেই রেগে গেলেন তিনি, ‘আমি বাবা বেচি না।’ পরক্ষণেই এক কিশোর এসে জানাল, ‘বাবা’র দাম বেশি। আগে টাকা দিলে এনে দেওয়া যাবে।
গতকাল মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে রেললাইনের দুই পাশের বস্তিতে পরিচয় গোপন করে মাদকের খোঁজ নিতে গিয়ে পাওয়া গেল এই চিত্র। গত রোববার এ বস্তিতেই কয়েকশ’ পুলিশ মিলে অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েছিল। এর একদিন বাদেই এই মাদক বিক্রির স্পটে গিয়ে দেখা গেল, অভিযানের পর বস্তিকেন্দ্রিক মাদক বেচা কমলেও তা ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে। এখন ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে মাদক।
রেললাইনের বস্তির দুই পাশে অন্তত ১০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলছিলেন, পুলিশের দৌড়ঝাঁপের পর কারওয়ান বাজারের খুপরি ঘরগুলোতে মাদকের বিক্রি কমেছে। তবে বন্ধ হয়নি। একসময়ে এসব খুপরি ঘরে ইয়াবা সেবন করা গেলেও তা আপাতত বন্ধ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে দু’জন বাসিন্দা বলছিলেন, রোববারের আগে থেকেই বস্তির চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকা ছেড়ে গেছে। অভিযানের পর ক্রেতাও কমেছে। তবে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকা ছাড়লেও যোগাযোগ ঠিকই রাখছে। বস্তির বিভিন্ন কিশোরকে এসব কাজে ব্যবহার করছে এরা। ক্রেতা পেলেই এসব কিশোর আশপাশের কোথাও থেকে ইয়াবা এনে দিচ্ছে।
ঘটনাস্থলেই মাদকের একজন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা বলছিলেন, আগে তো পুলিশ টাকা নিত। লাইনম্যানরা টাকা নিত। এখন টাকা নেয় না। দেখলেই দৌড়ানি দেয়। তবে লাইনম্যানরা বলেছেন, আশ্বাস দিয়েছেন, প্রশাসনের গরম কমলে আবার সবকিছুই বেচা যাবে।
রেললাইনের পাশেই আবদুর রহিম নামের এক ব্যক্তি বলছিলেন, কয়েক দিন আগেও কারওয়ান বাজার রেললাইনের দুই পাশে ইয়াবা আর গাঁজার গন্ধে ঢোকা যেত না। এখন পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। লোকজন আসে, দ্রুতই কিনে নিয়ে যায়।
খুপরি ঘরের তাছলিমা বলছিলেন, ‘মাদক বিক্রি করলে তো আর ঘরে থাকতে পারতাম না। যারা বেচে, তারা পালাইছে। পুলিশ সব উঠাইয়া দিছে। এখন বাইরে থেকে কেউ আইসা মাদক বেচে, আবার চইলা যায়।’
কারওয়ান বাজার রেলগেটের পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় বিল্লালের সঙ্গে। কিছুক্ষণ আগেই তিনি গাঁজা কিনে বের হয়েছেন একটি খুপরি ঘর থেকে। বিল্লাল কারওয়ান বাজারেই শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি বলছিলেন, তিনি ‘সিদ্ধি’ (গাঁজা) খান। আগে ২০ টাকার কিনে এখানে বানিয়েই দুবার টানতেন। আজ (মঙ্গলবার) ৫০ টাকার কিনেও একবারের বেশি হবে না।
বিল্লাল বলছিলেন, পুলিশ নাকি সবারে ধইরা নিয়া গেছে। এ জন্য এরা গাঁজার দাম বাড়াইয়া দিছে। আবার এখানে খেতেও দেবে না।
অভিযানের পর কারওয়ান বাজার মাদক স্পটের পরিস্থিতি জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, তারা চলতি বছরের শুরু থেকেই চিহ্নিত স্পটটি গুঁড়িয়ে দিতে কাজ করছিলেন। এরপর টুকটাক কিছু মাদক বিক্রি হতো। রোববারের অভিযানের পর সেটাও এখন বন্ধ। ওসির দাবি, কারওয়ান বাজারের মাদক স্পটে মাদক বিক্রি এখন শূন্যের কোঠায়। কোনো মাদক ব্যবসায়ী যাতে এখানে আর দাঁড়াতে না পারে, পুলিশ সে জন্য ওই এলাকায় নজরদারি করছে।