Current Date:Nov 29, 2024

হলি আর্টিজানে হামলার ২ বছর: চার্জশিটে থাকছে না হাসনাতের নাম

নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ২ বছর কাল। ওই হামলা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চার্জশিট দেওয়ার পালা। জানা গেছে, সে হামলায় আলোচিত হাসনাত রেজা করিমের নাম থাকছে না চার্জশিটে। তদন্তে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনোভাবেই তার সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ওই রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় নতুন ধারার জেএমবির প্রশিক্ষিত ৫ জঙ্গি। জঙ্গিরা সেদিন রেস্তোরাঁর ভেতরে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এর আগে ঘটনার শুরুতেই তাদের হাতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরের দিন অর্থাৎ ২ জুলাই সকালে কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় হামলায় অংশ নেওয়া ৫ জঙ্গি।

জঙ্গি হামলা এবং নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানোর ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগ মামলাটির তদন্ত করছে। সংস্থাটি ইতোমধ্যে মামলার তদন্তকাজ শেষ করে এনেছে। এখন চার্জশিট দেওয়ার পালা। ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

পুলিশের তদন্তকারী সূত্রগুলো বলেছে, জীবিত ও পলাতক ৮ জঙ্গিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হচ্ছে। তবে চার্জশিটে বহুল আলোচিত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমকে আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ২ বছর ধরে চলা তদন্তে এই জঙ্গি হামলার সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনোভাবেই সম্পৃক্ত পায়নি পুলিশ। এ ছাড়া সন্দেহভাজন আরেক আসামি তাহমিদেরও ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা মেলেনি। যদিও ঘটনার পর একাধিক গণমাধ্যমে খবর আসে ঘটনার মূল খলনায়ক হাসনাত রেজা করিম। হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ছাদে অস্ত্র হাতে থাকা তাহমিদ ও কাঁধে অস্ত্র ঝোলানো জঙ্গি রোহানের সঙ্গে হাসনাত রেজা করিমের সন্দেহজনক গতিবিধির ছবি আসে গণমাধ্যমে। প্রকাশিত ওই ছবি নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়।

পুলিশের তদন্তকারী সূত্রগুলো জানিয়েছে, তাহমিদকে অস্ত্র হাতে নিতে জঙ্গিরা বাধ্য করেছিল। ওই অস্ত্র হাতে হাসনাত রেজা করিমকে ছাদে নিয়ে যায় তারা। ঘটনার পর যেসব জিম্মিকে পুলিশ উদ্ধার করে আদালতে দেয় তাদের জবানবন্দিতে বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ছাড়া হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা ৬ জঙ্গি আদালতে ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছে তাতে হাসনাত রেজা করিম ও তাহমিদের নাম আসেনি।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর র্যাব-পুলিশ রাজধানীসহ দেশজুড়ে জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে গত দুই বছরে ২৫টির মতো বড় জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় অভিযানে ৭৩ জঙ্গি নিহত হয়। তাদের মধ্যে তামিম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর জাহিদুল ইসলাম, বাশারুজ্জামান চকলেট, সারোয়ার জাহান মানিকসহ ১৩ জঙ্গি গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর জঙ্গি হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে হাসনাত রেজা করিম, রাজীব গান্ধী, বড় মিজান, সোহেল মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর ও রিগ্যানকে। হাসনাত রেজা করিম ছাড়া অপর ৬ জঙ্গি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের মধ্যে কেউ অস্ত্র সরবরাহ করেছে, কেউ পরিকল্পনা করেছে। কেউবা অর্থ দিয়েছে। এই ৬ জন ছাড়াও পলাতক দুই জঙ্গি নেতা মামুনুর রশীদ রিপন ও শরীফুল ইসলাম খালিদ অভিযুক্ত হচ্ছে চার্জশিটে। মারা যাওয়া ১৩ জনের নাম থাকছে চার্জশিটে। তবে তাদের আসামি করা হচ্ছে না। কিন্তু তাদের কে, কীভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তার বর্ণনা থাকবে।

ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলা ছিল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। এই হামলায় কারা পরিকল্পনা করেছে, অর্থ দিয়েছে, অস্ত্র সরবরাহ করেছে তদন্তকালে তার সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। চার্জশিটে এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করেছি।
তদন্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার এক বছর আগে তামিম চৌধুরী, সারোয়ার জাহান মানিকসহ অন্য জঙ্গি নেতারা মিলে বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়ে যাত্রা শুরু করে নব্যধারার জঙ্গিবাদের। শুরুতে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০০ জন। এর মধ্যে ৩১ জন গৃহত্যাগ করে পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে হিজরতের মাধ্যমে নব্য ধারার জেএমবির জঙ্গি আস্তানায় ওঠে। এরপর তারা বাংলাদেশে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা চালানোর আগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছোট ছোট জঙ্গি হামলা শুরু করে।

তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জঙ্গিরা নিজেদের শক্তি, প্রশিক্ষণ ও সামরিক শাখাকে সমৃদ্ধ করতে সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য মেজর জাহিদুল ইসলামকেও নব্য ধারার জঙ্গি দলে ভেড়ায়। সংগঠনে যাকে সবাই চিনত মেজর মুরাদ নামে। এ ছাড়া চিকিৎসক, ব্যাংকার, চাকরিজীবী, শিক্ষক, ছাত্রসহ আরও নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষকে নব্য জেএমবির দলে ভেড়ায়। তারা বড় হামলার জন্য বেছে নেয় হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁকে। কারণ সেখানে অধিক সংখ্যক বিদেশি পাওয়া যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গাইবান্ধার চরে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। সেখানে গুলশান হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাস্টিকার ছাত্র মীর সামিহ মোবাশ্বের, মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নিবরাস ইসলাম এবং বগুড়ার শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ দেন সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ ও রায়হান কবির তারেক। এই দুজনের মধ্যে মেজর জাহিদ রূপনগরে ও রায়হান কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত হয়।

গুলশান হামলার মূল মাস্টারমাইন্ড ও সমন্বয়কারী ছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী। হামলার অপারেশনাল কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে নুরুল ইসলাম মারজান। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং হামলার পরিকল্পনায় আরও ছিল রাজীব গান্ধী। তানভীর কাদেরী, মেজর জাহিদুল ইসলাম, আকাশ, বাশারুজ্জামান চকলেটসহ আরও বেশ কয়েকজনও ছিল পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত। সূত্র: দৈ,আ,স

Share