স্পোর্টস ডেস্ক: রাশিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ডের অদম্য এগিয়ে চলা অবশেষে থামল। দারুণ খেলে তারা ইংলিশ ফুটবল এবং দলের বাঁকবদলের ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে এত কিছুর পরও ইংলিশ সমর্থকদের সেই ১৯৬৬ বিশ্বকাপ সাফল্যের গল্পই বলতে হবে, অন্তত পরবর্তী চার বছরের জন্য। তবে ডার্ক হর্স হিসেবে এসেও দুর্দান্ত খেলেছে ইংল্যান্ডের এই দলটি।
ক্রোয়েশিয়ার আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার লুকা মডরিচ। ইংল্যান্ডের স্বপ্নভঙ্গের কারণ মডরিচের ক্রোয়েশিয়ার অসাধারণ ফুটবল। যখন সবাই একরকম ধরেই নিয়েছে যে ইংল্যান্ড ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, তখনই জ্বলে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। দুর্দান্ত এক গোলে সমতা ফিরিয়ে আনে তারা। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। শুরুতে পিছিয়ে পড়ে সমতা ফিরিয়ে আনা ক্রোয়েশিয়া তখন আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে। সে আত্মবিশ্বাসে ভর করে জিতেছেও ক্রোয়েশিয়া। অথচ শুরুতে একের পর এক আক্রমণ করে গেছে ইংল্যান্ড। তবে ক্রোয়াটদের প্রবল ইচ্ছাশক্তির বিরুদ্ধে আর পেরে ওঠেনি শেষ পর্যন্ত। ধীরে ধীরে মানিয়ে নেওয়া মডরিচের ধূর্তামির কাছে হার মেনেছে ইংল্যান্ড।
ক্রোয়েশিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যকার সেমিফাইনালে আমরা আরেকবার দেখলাম এ মাপের টুর্নামেন্টে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে কী করতে হয়। প্রতিটি ম্যাচই আলাদা একটি যুদ্ধক্ষেত্র। সে যুদ্ধ আবার সব সময় একই ধাঁচে জেতা যায় না, পরিস্থিতি সামাল দিতে জানতে হয়। বলের দখলের সঙ্গে সঙ্গে ছন্দও হারিয়েছে ইংল্যান্ড।
মারিও মান্দজুকিচ এমন একটা সময়ে গোলটা করেছে যে ইংল্যান্ডের আর কিছুই করার ছিল না। অবশ্য ইংল্যান্ডের এমন বিদায় এবারই প্রথম নয়, এভাবেই বড় আসর থেকে পিছলে পড়ে ওরা। তবে এটা ঠিক যে গ্যারেথ সাউথগেটের তরুণ দল যে নৈপুণ্য দেখিয়েছে তাতে আশাবাদী হওয়ার অনেক উপকরণ রয়েছে। নিজেদের ফুটবল ভবিষ্যত্ নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতেই পারে ইংল্যান্ড। মাত্র ৪১ লাখ মানুষের দেশ ক্রোয়েশিয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষার স্রোতে এবার ভেসে গেছে সে স্বপ্ন। রবিবার ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে লড়বে ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্সের সুবিধা হলো, ফাইনালের আগে ক্রোয়েশিয়ার চেয়ে একটা দিন বেশি বিশ্রাম পাচ্ছে। তবে ক্রোয়াটদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। স্বপ্ন সত্যি করার ম্যাচে ওরাও ঝাঁপাবে। তার ওপর ১৯৯৮ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হারের প্রতিশোধ নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে মডরিচদের সামনে।
তবে এ তো আর নিছকই প্রতিশোধের ম্যাচ নয়, বিশ্বসেরার মুকুটও নির্ধারিত হবে রবিবার। দু-দলই সেরা পরিকল্পনা নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে কাপ জিততে। সময়ের হিসাবে এবারের আসরে ফ্রান্সের চেয়ে ‘একটি ম্যাচ’ বেশি খেলেছে ক্রোয়েশিয়া, তিনটি ম্যাচ নিয়ে গেছে অতিরিক্ত সময়ে। এতে ওরা কি ক্লান্তিতে আক্রান্ত? যদি সেটা হয়ও, ক্রোয়াটদের রয়েছে শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ। বিকল্পের অভাব নেই কোচের হাতে। এবারের আসরের সব দলের এত বেশি সুবিধা ছিল না, যতটা আছে ক্রোয়াটদের। এবারের ফ্রান্সও দারুণ শক্তিশালী। দিদিয়ের দেশমের রণপরিকল্পনা আর একঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলারের সম্মিলনে ফ্রান্সের এই দলটি জানে কার বিপক্ষে কিভাবে লড়তে হবে।
অবশ্য আমার কাছে ক্রোয়েশিয়ার উত্থান পর্বটা অবিশ্বাস্য। কোনো সন্দেহ নেই, প্রথমবার শিরোপা জয়ের জন্য ওরা সবটুকু নিংড়ে দেবে। অন্যদিকে ফ্রান্সের সামনে শিরোপা পুনরুদ্ধারের সুযোগ। রবিবার মহারণ হবে মস্কোয়। দেখা যাক সে লড়াইয়ের পর আমরা ক্রোয়েশিয়ার মতো নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নাকি ফ্রান্সের দ্বিতীয় কাপ জয়ের সাক্ষী হই। আমার অভিজ্ঞতা বলছে ফ্রান্স কিন্তু হূদয় বলছে ক্রোয়েশিয়া।