স্পোর্টস ডেস্ক : লুঝনিকির রাতটা ভুলতে পারছেন না ফুটবল দর্শকরা। কারণ সে রাতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালের মঞ্চে দাঁড়িয়েছে। সিংহ শিকারী ক্রোয়েটরা এখন ফুটবল রূপকথা লিখতে শুরু করেছে। করবেই না কেন! এই বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে যারা মাথা ঘামান তারা তো শুরুতে ক্রোয়েশিয়াকে পাত্তাই দেননি।
মেসি-নেইমারে আক্রান্ত ফুটবল দুনিয়া ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে ভাবেনি। ভাবেনি স্টারলিং, পেরিসিচ, লুকা মরডিচ, রেবিচ, মানজুকিচ কিংবা রাকিটিচকে নিয়ে। তাদের পায়ে জাদু আছে সেটা খেয়াল রাখেননি মেসি-নেইমারে অন্ধ হয়ে থাকা ফুটবল দুনিয়া। কিন্তু সেই সব মহাতারকারা অনেক আগেই রাশিয়ার বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে খসে পড়েছেন বলেই সবার কণ্ঠে একটাই কথা শোনা গিয়েছিল: ‘বিশ্বকাপটা শেষ হয়ে গেল। মেসি চলে গেল। রোনালদো চলে গেল। শেষ পর্যন্ত নেইমার ছিল, সে-ও চলে গেল। তাহলে কেনই বা আর বিশ্বকাপ ফুটবল দেখব?’
তবে হতাশাগ্রস্ত ফুটবল দর্শকদের জ্যোতিষীর কাছে যেতে হয়নি। ক্রোয়েশিয়ার মরডিচ, মানজুকিচ, রেবিচদের ফুটবল শৈলী মুখ ফিরিয়ে নেয়া দর্শকদের কাছে টেনে নিয়েছে। টিভির পর্দায় বসিয়ে দিয়েছে তাদের। এখন ঘরে ঘরে প্রশংসা ক্রোয়েটদের। কী তেজই না দেখালেন মরডিচরা! ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পরও গোল শোধ করে অতিরিক্ত সময়ের খেলায় ২-১ গোলে ইংল্যান্ড সিংহদের রীতিমতো বিড়াল বানিয়ে দিলেন!
সেমিফাইনালে উঠে ইংল্যান্ড চেয়েছিল নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন ইতিহাস উপহার দিতে। কেননা ৬৬ বিশ্বকাপে ট্রফি জয়ের পর আর কখনো ফাইনালের টিকিট পায়নি ইংলিশরা। এবার ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে ফ্রান্সকেও বধ করার স্বপ্ন দেখেছিল তারা! পৃথিবীটাকে যেভাবে শাসন করেছিল, সেভাবেই ফুটবল দুনিয়ার ১২০ গজের মাঠও শাসন করতে চেয়েছিল! কিন্তু খেলাটা যে পায়ের। মেধার। শিল্পের। সেখানেই হেরে গেল ইংলিশ সিংহরা।
যে গোল দুটি করেছেন ইভান পেরিসিচ এবং মানজুকিচ সেটা দেখলেই বুঝা যায়। কতটা নিখুঁত ফিনিশিং দেওয়ার শৈল্পিক কাজটা তাদের শিখিয়েছেন কোচ জলাতকো দালিচ। ছিলেন সৌদি আরব, আরব আমিরাতের ক্লাব ফুটবলের কোচ। ক্রোয়েশিয়া থেকে অনেক দূরেই ছিলেন তিনি। এই কোচ দালিচকে নিয়ে এলেন ক্রোয়েশিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক ফুটবল তারকা ডেবর সুকার। দায়িত্ব দিলেন ক্রোয়েশিয়ান ফুটবল দলের। আর দালিচের হাত ধরেই ক্রোয়েশিয়া ফুটবলের ধরন পাল্টে গেল। মিলল একর পর এক সাফল্য।
আগামী রবিবার বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল। ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া। ক্রোয়েশিয়া দলে আছেন ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ পাওয়া চার ফুটবলার। যাদের অভিজ্ঞতা অনেক। যা দিয়ে ফ্রান্সের মতো দলকে বধ করার মতো ক্ষমতা রাখে ক্রোয়েশিয়া। সৃষ্টি করতে পারে ফুটবল ইতিহাসে নতুন রূপকথা!