অনলাইন ডেস্ক : আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন দু’টি জোটের বাইরে ‘বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের আটটি বাম দলের সমন্বয়ে নতুন ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
এ উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ জোটের নেতারা বলেন, ‘বর্তমান সংকটময় অবস্থা থেকে দেশ ও গণতন্ত্র বাঁচানোর’ লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রামে নামবেন তারা।
নতুন জোটের দলগুলো হচ্ছে— বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। সূচনা বক্তব্য দেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান।
অন্যদের মধ্যে বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এটি নির্বাচনকেন্দ্রিক তথা ভোটর্সবস্ব কোনো জোট নয়। আন্দোলনের প্রয়োজনে তারা নির্বাচনে যাবেন, প্রয়োজনে ভোট বয়কট করবেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। তাই তাদের আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে নির্বাচন কমিশনে সংস্কার আনাতে বাধ্য করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, প্রহসনমূলক নির্বাচন না হয়ে সুষ্ঠু ভোট হলে বামদের প্রকৃত শক্তি বোঝা যাবে। যদি বামদের শক্তি এতই দুর্বল হত, তাহলে শাসকশ্রেণি তাদের ওপর এত নিপীড়ন চালাতো না।
প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগের সমালোচনা করে সিপিবি সভাপতি বলেন, তারা জামানতের টাকা কমানোর দাবি করেছিলেন। কিন্তু কমানো দূরের কথা, ইসি তা ৫০ হাজার টাকা করার চিন্তাভাবনা করছে। এ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।
নতুন এই জোটে অন্য কোনো বাম দলের আসার সুযোগ আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, এটি সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ আছে।
বামদের বিভাজন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বামদের মধ্যে যদি বিশটা ভাগ থাকে তাহলে ডানপন্থি দলগুলোর মধ্যে দুইশ’ ভাগ আছে। মিডিয়া কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে এগুলো আলোচনায় আসে না।
সংবাদ সম্মেলনে জোটের প্রথম সমন্বয়ক হিসেবে সাইফুল হকের নাম ঘোষণা করা হয়। জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন— মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, শাহ আলম, খালেকুজ্জামান, বজলুর রশীদ ফিরোজ, সাইফুল হক, আকবর খান, শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, জোনায়েদ সাকি, ফিরোজ আহমেদ, মোশাররফ হোসেন নান্নু, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, মোশরেফা মিশু, মমিন উর রহমান বিশাল, হামিদুল হক ও রণজিত কুমার।
এ সময় নতুন জোটের আন্দোলন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ২৪ জুলাই ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ। ওইদিন ঢাকায় বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ হবে। এছাড়া ভোটাধিকার নিশ্চিত ও বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবিতে ৪ আগস্ট ঢাকায় মতবিনিময় সভা এবং ১০ ও ১১ আগস্ট দেশের ছয়টি বিভাগীয় শহরে জনসভা-সমাবেশ ও মিছিল করবে নতুন এই বাম গণতান্ত্রিক জোট।