বিনোদন প্রতিবেদক : একদিকে কাজ অন্যদিকে জয়, আমার এই দুই পৃথিবী নিয়ে আমি এখন বেশ আছি। নেই কোনো চিন্তা। বেশ ফুরফুরে দিন কেটে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এইতো বেশ ভালো আছি। চিরাচরিত হাসি মাখা মুখ গলিয়ে সাবলীলভাবে বলে গেলেন মিষ্টি মেয়ে অপু বিশ্বাস। এখন শ্রাবণ মেঘের দিন। অঝোরে কিংবা টিপ টিপ করে যখন বৃষ্টি ঝরে তখন কি মনটায় কোনো নস্টালজিয়া এসে ভিড় করে। মনে পড়ে অতীতের বিশেষ কোনো স্মৃতিঘেরা কথা?
পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ঢালিউডের মিষ্টি মেয়ে অপু বিশ্বাস বলেন, মানুষের জীবনটাইতো একটা স্মৃতির আধার। পথ চলতে পথের দুধারে শুধু ফুল থাকে না, সেই ফুলে কাঁটাও থাকে। সে কাঁটার আঘাতে মনের গভীরে ক্ষত হয়, রক্ত ঝরে। তাই বলে কী জীবন থেমে থাকে?
জয়কে ঘিরে সময় এখন কেমন কাটছে?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে হেসে উঠলেন ঢালিউডের জনপ্রিয় এই নায়িকা। এ হাসিতে তৃপ্তির লেশ ছিল, স্বস্তির গভীরতাও মাপা গেল। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে আবার জানতে চাইলেন, ও হ্যাঁ কী যেন বললেন, আচ্ছা জয়ের কথা, দাঁড়ান বলছি, আরে জয়তো আমার বুকভরা পৃথিবী। তার আধো আধো বোলে ‘মা’ ডাকা শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। আহা সে কি পরম মমতা। তারপর দুজন মিলে খেলায় মেতে উঠি। ওর যত রাজ্যের আবদার আর খেলাধুলায় দিনটা টইটম্বুর হয়ে ওঠে। মুহূর্তেই হারিয়ে যাই স্বপ্নের মায়াঘেরা পৃথিবীতে। স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে দুজনে উঠে যাই স্বপ্নীল ভুবনে। এই সুখের নেই কোনো ঠিকানা। খোলা ছাদে দাঁড়িয়ে দুহাত বাড়িয়ে পৃথিবী আর আকাশ বাতাসকে জানিয়ে দিতে চাই—‘আমার মতো এত সুখের নয়তো কারও জীবন’। আবার তৃপ্তির হাসির ঢেউ অপুর স্নিগ্ধ মায়াবী চোখে মুখে।
জয়ের বেড়ে ওঠা নিয়ে অপুর উচ্ছ্বাস ভরা কথা ‘ওর মাঝে প্রতিনিয়ত ট্যালেন্ট লতিয়ে উঠছে’ দোয়া করবেন বিধাতা যেন ওকে দীর্ঘ জীবন দেন আর সত্যিকারের মানুষ করে গড়ে দেন। আমি আর কাঁদতে চাই না। দুচোখকে বলেছি, আর অশ্রু নয়, এবার রংধনুর সাত রঙে ঘেরা পৃথিবী আর আমার জয়কে দেখতে চাই। বলতে বলতে আনমনা হয়ে দূর আকাশে দৃষ্টি মেলেন স্নিগ্ধতায় ভরা অপু।
এবার কাজের কথা শুনতে চাই, কয়েকবার এ প্রশ্নের পুনরাবৃত্তির পর মনভাঙা অপু যেন সম্বিত ফিরে পেলেন বাস্তবের পোড় খাওয়া জীবনে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন— ও হ্যাঁ কাজ, আসলে কাজ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়। এই যে এখন আমি দুরন্ত গতিতে সব ক্লান্তি ভুলে কাজের পেছনে অবিরাম ছুটে চলছি সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা-রাত্রি। হয়তো অনেকে বলতে পারেন ছবির কাজ কমিয়ে স্টেজ শো বা কোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অপুকে কেন বেশি দেখা যায়। এর সরল জবাব নিশ্চয়ই আছে আমার কাছে। ছবির কাজ শুরু করতে হলে মনের মতো গল্প আর চরিত্র পেতে হবে। আমাকেও অভিনেত্রী সুলভ গড়নে ফিরতে হবে। সেই জার্নিটাতো চলছেই। এরই মধ্যে ওপার বাংলার একটি ছবি ‘শর্টকার্ট’ আর এপার বাংলায় ‘শ্বশুর বাড়ি জিন্দাবাদ টু’ ছবিতে কাজ শুরু করেছি। স্টেজ শো আর নানা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনীতে কেন যুক্ত হই? তবে শুনুন, মানুষ যে আমাকে এত ভালোবাসে আমি যদি বিপদে না পড়তাম হয়তো বুঝতেই পারতাম না। মানুষের অবারিত ভালোবাসার টানে আমাকে এসব অনুষ্ঠানে ছুটে যেতে হয়। কাউকে না বলতে খারাপ লাগে। নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হয়। আমি কারও মনে দুঃখ দিতে চাই না। কারণ দুঃখ পাওয়াটা যে কত কষ্টের সেটা আমার মন জানে। আমি এখন সবাইকে সুখী করতে চাই আর নিজে আমার পরম আদরের জয়কে নিয়ে সুখী হতে চাই।
আগামী দিনগুলোর জন্য নতুন কিছু কি ভাবছেন? এমন প্রশ্নে সরলা অপুর চোখের কোণের জলকণা চিক চিক করে উঠে। লুকিয়ে চোখ মোছার ব্যর্থ চেষ্টা করেন মায়াবী অপু। তারপর আবার দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠেন— ওই যে বললাম, জয় এখন আমার সারাটা পৃথিবী। ওকে নিয়ে খুব সুখী হতে ইচ্ছে করে। জয়কে সত্যিকারের মানুষ করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনে সাত সমুদ্র পাড়ি দেব। সেই পথ ধরে মা আর ছেলে চলে যাব অনেক দূরে। কোনো এক শান্তিপুর গ্রামে। যেখানে থাকবে শুধু অনাবিল সুখ আর অবারিত শান্তি। আমি আর জয় কখনই আর দুঃখের মুখ দেখতে চাই না। শান্তিপুর গ্রামে চির শান্তির দেখা পেতে চাই। আকাশে কান পেতে শুনতে চাই—‘পৃথিবীতে সুখ বলে যদি কিছু থাকে সে আমার প্রেম…।’ বাংলাদেশ প্রতিদিন