পেসের চেয়ে স্পিনটাই ভালো খেলে থাকেন আফগানিস্তানের ব্যাটাররা। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশের ওয়ানডে স্কোয়াডে রাখা হয়েছে পেসারদের আধিক্য। আজ (বুধবার) সিরিজের প্রথম ম্যাচেও দুই স্পিনারের সঙ্গে একাদশে রাখা হয়েছে তিন পেসার। আর সেই পেসাররাই এনে দিয়েছেন সাফল্য।
তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের সম্মিলিত আক্রমণে আফগানিস্তানকে ২১৫ রানে অলআউট করে দিয়েছে বাংলাদেশ। মোস্তাফিজ নিয়েছেন ৩ উইকেট। অন্য দুজনের শিকার দুইটি করে উইকেট। এছাড়া বাঁহাতি স্পিনে সাকিব আল হাসানও নিয়েছেন ২টি উইকেট।৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিততে বাংলাদেশ দলের প্রয়োজন ২১৬ রান।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তিনি জানিয়েছিলেন, টস জিতলে নিতেন আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত। তা না পেলেও, দ্বিতীয় ইনিংসেও উইকেট ভালো থাকবে বলে আশাব্যক্ত করেন তামিম। সেই আশায় ২১৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামবে বাংলাদেশ।
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আফগানদের চেপে ধরে বাংলাদেশের বোলাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মিলতে পারতো প্রথম সফলতা। আঁটসাঁট ফিল্ডিংয়ে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে বেঁধে রাখার চেষ্টায় প্রায় সফলই ছিলেন তাসকিন আহমেদ। কিন্তু অল্পের জন্য বল চলে যায় শর্ট পয়েন্টে দাঁড়ানো আফিফ হোসেন ধ্রুবর হাতে লেগে।
অবশ্য জীবন পেয়েও কিছু করতে পারেননি আফগানিস্তানের উইকেটরক্ষক ব্যাটার। পরের ওভারেই মোস্তাফিজুর রহমানের বলে মিড অনে ধরা পড়েন ৭ রান করা গুরবাজ। তার ক্রস ব্যাটের শটে দীর্ঘক্ষণ বল ভেসে ছিল হাওয়ায়। পূর্ণ মনোযোগ ধরে রেখে তা নিরাপদে তালুবন্দী করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
প্রথম পাওয়ার প্লে’র দশ ওভারের মধ্যেই আরেক ওপেনারকে ফেরাতে পারতো বাংলাদেশ। তাসকিনের করা ষষ্ঠ ওভারে বাউন্সারে পুল করেছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। বল সোজা চলে যায় ফাইন লেগে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে। কিন্তু যথাসময়ে ঝুঁকে সেটি হাতে জমাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ফলে ৩ রানে জীবন পান ইব্রাহিম।
তাসকিনের বলে জীবন পেয়ে পরে তাসকিনেরই পরের ওভারে ১ চার ও ১ ছয়ের মারে ১৫ রান তুলে নেন আফগান ওপেনার। যা খানিক চাপমুক্ত করে আফগানদের। অবশ্য এরপর ফের তাদেরকে চেপে ধরেন সাকিব আল হাসান ও শরিফুল ইসলাম। যে কারণে ৮ ওভারে ৪০ থেকে দলীয় পঞ্চাশে পৌঁছতে তাদের খেলতে হয় ১৩ ওভার পর্যন্ত।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন ইব্রাহিম ও তিন নম্বরে নামা রহমত শাহ। ইনিংসের ১৪তম ওভারে এ জুটি ভাঙেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল। গুড লেন্থের ডেলিভারি কভার ড্রাইভের চেষ্টা করেছিলেন ইব্রাহিম। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় স্লিপে দাঁড়ানো ইয়াসির রাব্বির হাতে।
বাংলাদেশের অভিষিক্ত ক্রিকেটারের ক্যাচে পরিণত হয়ে ফেরা ইব্রাহিমের ব্যাট থেকে আসে ১ চার ও ১ ছয়ের মারে ২৩ বলে ১৯ রান। পরের ওভারে আক্রমণে এসে মেইডেন দিয়ে প্রথম ঘণ্টার সমাপ্তি ঘটান মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথম ঘণ্টায় খেলা ১৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৫৬ রান করে আফগানিস্তান।
এরপর ইনিংস গড়ার কাজে মন দেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি ও রহমত শাহ। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তাদেরকে রান করার তেমন সুযোগ দিচ্ছিলেন না শরিফুল ও মিরাজ। টানা পাঁচ ওভারের স্পেলে এক মেইডেনসহ মাত্র ১০ রান খরচায় ১ উইকেট নেন তরুণ বাঁহাতি পেসার শরিফুল।
শরিফুলকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে ২০তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে আনা হয় তাসকিনকে। এক ওভার পরই নিজের প্রথম সাফল্য পান এ ডানহাতি পেসার। তার ব্যাক অব লেন্থের ডেলিভারিটি রহমতের ব্যাটে কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। দৃঢ় ব্যাটিংয়ে ৬৯ বলে ৩ চারের মারে ৩৪ রান করেন রহমত।
রহমতের বিদায়ে উইকেটে আসেন অলরাউন্ডার নাজিবউল্লাহ জাদরান। ফলে উইকেটে একসঙ্গে দেখা যায় দুই বাঁহাতি ব্যাটারকে। তাই মেহেদি মিরাজকে আর আক্রমণ থেকে সরাননি তামিম। চতুর্থ উইকেট জুটিতে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা দেখা যায় নাজিব ও হাশমতউল্লাহর ব্যাটে।
তাই জুটি ভাঙার জন্য ২৮তম ওভারে আরেক অফস্পিনার মাহমুদউল্লাহকে আনা হয় বোলিংয়ে। হতাশ করেননি এ অভিজ্ঞ স্পিনার। তার ওভারের শেষ বলে কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন আফগান অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ৩ চার ও ১ ছয়ের মারে ৪৩ বলে ২৮ রান করেন হাশমতউল্লাহ। সেই ওভারেই অবশ্য দলীয় শতরান পূরণ হয় আফগানদের।
একশ রান করতে ২৮ ওভার খেলে ফেলার পর দলের দায়িত্ব নেন দুই অলরাউন্ডার নাজিবউল্লাহ ও মোহাম্মদ নবি। এরই মাঝে টানা দশ ওভারের স্পেল করে ফেলেন মিরাজ। ১৫তম ওভার থেকে ৩৩তম ওভার পর্যন্ত টানা ১০ ওভারে ৩ মেইডেনসহ মাত্র ২৮ রান খরচ করেন এ ডানহাতি অফস্পিনার। তবে বাঁহাতি স্পিনার সাকিবের ওপর চড়াও হন নাজিব, পরপর তিন ওভারেই পান বাউন্ডারির দেখা।
অন্যপ্রান্তে দেখে শুনে খেলতে থাকেন নবি। দুজনের দায়িত্বশীল ব্যাটে ৩৭ ওভারেই পূরণ হয়ে যায় আফগানিস্তানের দলীয় দেড়শ রান। এ জুটিকে বেশি দূর এগুতে দেননি তাসকিন। নিজের শেষ স্পেলে আক্রমণে এসে তৃতীয় বলেই নবিকে ফেরান তিনি। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করেছিলেন নবি।
ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে যাওয়া বলটি গ্লাভসবন্দী করে ম্যাচে নিজের তৃতীয় ক্যাচ ধরেন মুশফিক। নবির ব্যাট থেকে আসে ২৪ বলে ২০ রান। নবির বিদায়ে ভাঙে ৬৩ রানের জুটি। অগ্রজ সতীর্থ ফিরে গেলেও রয়েসয়ে নিজের ফিফটি তুলে নেন নাজিব। ক্যারিয়ারের ১৩তম ফিফটি করতে তিনি খেলেন ৭০ বল। যেখানে ছিল ৪ চার ও ১ ছয়ের মার।
নাজিবের সঙ্গে জুটি বেঁধে আফগানদের লড়াকু সংগ্রহের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন গুলবদিন নাইব। মনে হচ্ছিল এ জুটিতেই পার হয়ে যাবে দুইশ রান। তা হতে দেননি সাকিব আল হাসান। খানিক খরুচে দিন কাটানো সাকিব ৪৫তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন। ওভারের তৃতীয় বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে দেলেন ১৭ রান করা গুলবদিনকে। শেষ বলে রানের খাতা খোলার আগেই বোল্ড হয়ে যান রশিদ খান।
পরের ওভারে দারুণ এক স্লোয়ারে মুজিব উর রহমানের বিদায়ঘণ্টা বাজান মোস্তাফিজ। মাত্র ৯ বলের ব্যবধানে ৩ উইকেট নেওয়ায় তখন দুইশর আগেই জাগে আফগানদের অলআউট করার সম্ভাবনা। কিন্তু নাজিব তখনও টিকে ছিলেন। তিনিই দলকে নিয়ে যান ২১৫ রান পর্যন্ত। তবে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকতে পারেননি।
শরিফুলের করা ইনিংসের ৪৯তম ওভারে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে মাহমুদউল্লাহর হাতে ধরা পড়েন ৬৭ রান করা নাজিব। তার ব্যাটেই মূলত ২১৫ পর্যন্ত গিয়েছে আফগানিস্তানের ইনিংস। শেষ ওভারের প্রথম বলে ইয়ামিন আহমেদজাইকে ফিরিয়ে আফগানিস্তানের ইনিংস মুড়িয়ে দেন মোস্তাফিজ।