Current Date:Nov 26, 2024

সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ফেরত দেননি শীর্ষ ২৫ খেলাপি

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপি গ্রাহকের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার বেশি। এসব ঋণের ৯ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের খেলাপি ঋণের এ তথ্য সংসদীয় কমিটিকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খেলাপি ঋণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

শীর্ষ ঋণখেলাপিদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে, তাতে ঋণের পরিমাণ ও খেলাপির তথ্য উল্লেখ করা হলেও কোন ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ অর্থ নেয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তালিকার ২৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স। প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৮৮৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যার পুরোটাই খেলাপি হয়ে গেছে। এর পর রয়েছে কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেডের নাম। প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৭৪৪ কোটি টাকা ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৫৫৮ কোটি ৯ লাখ টাকা।

তালিকার অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৫৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যার পুরোটাই খেলাপি। ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের বকেয়া ও খেলাপি ঋণ ৫২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৫৩৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ৫১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ঢাকা ট্রেডিং হাউজের বকেয়া এবং খেলাপি ঋণ ৪৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা, আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের বকেয়া এবং খেলাপি ঋণ ৪৭৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সিদ্দিক ট্রেডার্সের বকেয়া ঋণ ৫৯৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, যার মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৪২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ইয়াসির এন্টারপ্রাইজের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৪১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেডে ৪০১ কোটি ৭৩ লাখ, লিজেন্ড হোল্ডিংসে ৩৪৭ কোটি ৮৫ লাখ, হলমার্ক ফ্যাশন লিমিটেডে ৩৩৯ কোটি ৩৪ লাখ, ম্যাক ইন্টারন্যাশনালে ৩৩৮ কোটি ৭৪ লাখ, মুন্নু ফ্যাব্রিকসে ৩৩৮ কোটি ৩৭ লাখ এবং ফেয়ার ট্রেড ফ্যাব্রিকস লিমিটেডে ৩২২ কোটি ৪ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে।

শাহারিশ কম্পোজিট টাওয়েল লিমিটেডের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৩১৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ৩১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। নূরজাহান সুপার অয়েল লিমিটেডের বকেয়া ঋণ ৬৯৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ৩০৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। কেয়া ইয়ার্ন লিমিটেডের বকেয়া ঋণ ৩৬৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ২৯২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেডের বকেয়া ঋণ ২৮৭ কোটি ১ লাখ টাকা। এছাড়া ফেয়ার ইয়ার্ন প্রসেসিং লিমিটেডের ২৭৩ কোটি ১৬ লাখ, এসকে স্টিলের ২৭১ কোটি ৪৮ লাখ, চৌধুরী নিটওয়্যার লিমিটেডের ২৬৯ কোটি ৩৮ লাখ, হেল্প লাইন রিসোর্সেস লিমিটেডের ২৫৮ কোটি ৩০ লাখ, সিক্স সিজন অ্যাপার্টমেন্ট লিমিটেডের ২৫৪ কোটি ৫৭ লাখ ও বিসমিল্লাহ টাওয়েলস লিমিটেডে ২৪৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে।

এসব ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা আদায়ে এবং খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে একটি কমিটি করতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। ওই কমিটিকে আগামী দেড় মাসের মধ্যে করণীয় নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো কোন কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছে, তাদের পারিবারিক পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কমিটি খেলাপি ঋণ কমাতে সংশ্লিষ্ট আইন পরিবর্তনেরও সুপারিশ করেছে।

বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত আইনে যদি দুর্বলতা থাকে, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। কমিটিকে ব্যাংকগুলোও তাদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেছে। তারা বলছে, ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ আদালতে গিয়ে স্টে অর্ডার নিয়ে আবার অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। এজন্য কমিটি চিন্তা করছে, আইন মন্ত্রণালয় ও উচ্চ আদালতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে বসবে।

কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ঋণের টাকা আদায়ের কাজ জোরদার করতে ব্যাংকগুলো উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন, কিছু ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের মাধ্যমে নিয়মিত করা, ঋণ অবলোপন এবং খেলাপি গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

সংসদীয় কমিটির গতকালের বৈঠকে খেলাপি ঋণের পাশাপাশি শেয়ারবাজার নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন জানান, নির্বাচনের বছরে পুঁজিবাজারে যাতে কোনো অস্থিরতা তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে ২০১০ সালে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল, সেসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য নাজমুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, ফরহাদ হোসেন ও আখতার জাহান অংশ নেন।

শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপির আটটি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকায় শীর্ষ ঋণখেলাপি হিসেবে যে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে, তার মধ্যে আটটি চট্টগ্রামের। এ আট প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংকে বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ১২২ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে।

শীর্ষ ২৫ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রামের একসময়ের নামকরা গ্রুপ অব কোম্পানি মেসার্স ইলিয়াছ ব্রাদার্স। তালিকার ৩ নম্বরে অবস্থান করছে নূরজাহান গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জাসমির ভেজিটেবল অয়েল। শীর্ষ আটের মধ্যে আছে মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্সের নাম। ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের দায়ে সম্প্রতি গ্রেফতার হন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান স্বত্বাধিকারী আবু সাঈদ সম্রাট। তালিকার ৯ নম্বরে আছে ইয়াছির এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক এখন সপরিবারে কানাডায় অবস্থান করছেন। গত বছর খেলাপি হয়ে তালিকার শীর্ষ ১১তে রয়েছে লিজেন্ড হোল্ডিংস লিমিটেড। নূরজাহান গ্রুপের প্রতিষ্ঠান নূরজাহান সুপার অয়েলের নামও রয়েছে তালিকার ১৭ নম্বরে। এছাড়া কয়েক বছর ধরে বন্ধ থাকা সালেহ কার্পেট রয়েছে তালিকার ১৯ নম্বরে।

Share