অনলাইন ডেস্ক : কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেতে জটিলতায় পড়তে পারে। ‘মন্ট্রিয়াল চুক্তি ১৯৯৯’-এ বাংলাদেশ ও নেপালের স্বাক্ষরের বিষয়টি বিলম্ব হওয়ার কারণে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মন্ট্রিয়াল চুক্তির ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় যাত্রী মারা গেলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ নিহত প্রত্যেক যাত্রীর পরিবারকে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬২ ডলার (প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ৮৭ হাজার টাকা) করে দিতে বাধ্য। এই ক্ষতিপূরণের জন্য সবগুলো এয়ারলাইন্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে বীমা করে। এটি মোটরযানের বীমার মতো। নিয়ম অনুযায়ী, যাত্রী ও তাদের পরিবারকে এই ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে আগেই জানাতে হয়।
মন্ট্রিয়াল চুক্তিতে স্বাক্ষর না করলেও নেপাল সরকার ‘ওয়ার্সা’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করায় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে এখন প্রত্যেক যাত্রীর জন্য ২০ হাজার ডলার দিতে হবে। দেশটির বীমা প্রতিষ্ঠান সাগরমাথার কর্মকর্তা সুভাষ দিক্ষিত বলেন, এই ধরনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে দু’রকম নীতির মধ্যে পড়তে হবে নেপালকে।
১৯৯৯ সালের ২৮ মে বাংলাদেশ মন্ট্রিয়াল চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, কিন্তু সেটি এখনও অনুমোদন পায়নি। নেপাল এই চুক্তিতে এখনও স্বাক্ষর করেনি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, ভারত ও মালদ্বীপ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। মন্ট্রিয়াল চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশের যাত্রীরা ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬২ ডলার পায়।
নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘নেপাল সরকার মন্ট্রিয়াল চুক্তিতে স্বাক্ষরের বিষয়টি কখনও অগ্রাধিকার দেয়নি। প্রক্রিয়াটি চলছে ধীরগতিতে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মন্ট্রিয়াল চুক্তিতে স্বাক্ষরের বিষয়ে একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এটি সংসদে পেশ করার আগে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।’
প্রসঙ্গত, মন্ট্রিয়াল চুক্তি এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য সমঝোতা। ১৯৯৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের সদস্য দেশগুলো এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
গত ১২ মার্চ দুপুরে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করা ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫১ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে চার ক্রুসহ ২৬ জন ছিলেন বাংলাদেশি।
নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও ২২ জন নেপালি এবং একজন চীনের নাগরিক। নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের সংখ্যার দিক থেকে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।