নিউজ ডেস্ক : চতুর-চঞ্চল, আত্মগোপনে পারদর্শী, ডাকাডাকি ও গানে মাতিয়ে রাখা পুঁচকে পাখিটার মূল খাদ্য হচ্ছে ঘাসফড়িং, বিটল পোকা, কেঁচো, পিঁপড়ার টসটসে ডিমসহ অন্যান্য পোকা ও কীটপতঙ্গ। চারণক্ষেত্র মূলত ঘাসবন, কাশবন, ধানখেতসহ নানান রকম ঝোপঝাড়পূর্ণ এলাকা। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় চলে। পারতপক্ষে বাইরে বেরোয় না। তবে পলাতক উড়ন্ত ঘাসফড়িং ধরতে বেরোয়। লেজটা অনেকটাই জাপানি হাতপাখার মতো মেলতে পারে। ওই পাখা ওরা সারাক্ষণই ডানে-বাঁয়ে ও ওপর-নিচে দোলাতে থাকে, মোহনীয় ভঙ্গিতে পাখাও নাড়ে একই তালে। সুরেলা ধাতব ‘ব্রিপ’ ‘ব্রিপ’, ‘জিররর’ ‘জিরর’ শব্দে ডাকে । আনন্দে চুপচাপ এক জায়গায় বসে শিস বাজায়।
আবাসিক এই পাখিটার নাম পাখাটুনি, কাশটুনি, ঘাসটুনি ও চটপটে বুনো টুনি। সারা দেশে এদের খুব কমই দেখা যায়। ইংরেজি নাম Graceful prinia. বৈজ্ঞানিক নাম Prinia gracilis. দৈর্ঘ্য ১৩ সেন্টিমিটার। চমৎকার লেজটির পালকের অগ্রভাগ সাদা, ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখের উপরিভাগ দিয়ে চওড়া সাদাটে ধূসর রেখা টানা, মাথা-ঘাড়-পিঠ ও লেজের পালকের উপরিভাগ সরু কালচে রেখার চমৎকার বিন্যাস ও গলা-বুক-চিবুক ও পেটের উপরিভাগের সাদা রংটি পাখিটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। পেটের নিচের অংশের সাদার ওপরে বাদামি আভা মাখানো। কালচে পা এদের, গোলাপি ঠোঁট।
বাসা বাঁধার কাজ বলতে গেলে পুরুষ একাই করে। মেয়েটি সামান্য সাহায্য করে। একটি ডাবকে খাড়াভাবে মাটিতে চেপে রাখলে যে রকম দেখায়, এদের লতাপাতা-শিকড়বাকড়-শুকনো ঘাস ইত্যাদি দিয়ে বানানো বাসাটাও অনেকটাই ও রকম। মাটি থেকে দুই-চার ফুট ওপরে নল-বিন্নাবন-ছিটকা ঝাড়সহ হোগলাবন ও ঘাসবনে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে তিন-চারটি। ডিম ফুটে ছানা হয় ১১-১৩ দিনে। সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামগুলোর জলাভূমি-নদীতীরসহ অন্যান্য ঘাসবনে এরা সুলভই বটে।