Current Date:Nov 28, 2024

এক মাস ধরে অচলাবস্থা সচলের উদ্যোগ নেই

ডেস্ক রিপোর্ট : গত বুধবার দুপুরে রংপুরের কারমাইকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে দেখা গেল, অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলছে। শুধু তা-ই নয়, দরজার সামনের বারান্দায় বেশ কিছু চেয়ার ফেলে রাখা হয়েছে; যাতে কেউ এদিক দিয়ে যেতে না পারে। পাশে উপাধ্যক্ষের কক্ষেও তালা।

কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীল হয়ে থাকা কলেজ ক্যাম্পাসকে স্বাভাবিক করার দাবিতে ছাত্রলীগসহ কয়েকটি প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন মিলে ১২ মার্চ অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিয়েছে। অধ্যক্ষ মো. আবদুল লতিফ মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও শিক্ষকদের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক আচরণের’ অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণের দাবিতে শিক্ষকেরা এক মাসের বেশি সময় ধরে কখনো ক্লাস বর্জন, কখনো কালো ব্যাজ ধারণ ও অধ্যক্ষকে সহযোগিতা না করার মতো কর্মসূচি পালন করছেন। ফলে ঠিকমতো ক্লাস না হওয়াসহ শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর প্রভাব পড়েছে। কলেজে বর্তমানে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী ও ১৭৯ জন শিক্ষক রয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও জমা পড়েনি। একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অভিযুক্ত অধ্যক্ষ লতিফ মিয়া শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামের নাহিদের ভায়রা। ফলে সিদ্ধান্ত নিতে তাঁরাও কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন।

যদিও শিক্ষামন্ত্রী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেছেন, এখানে আত্মীয়তার কোনো বিষয় নেই। বরং এ ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এখন তদন্ত কমিটি যে সুপারিশ করবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।
আবদুল লতিফ মিয়া ২০১৬ সালের শেষ দিকে এই কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, শুরু থেকেই অধ্যক্ষ প্রায়ই শিক্ষকদের ‘অপমান’ করে কথা বলেন। নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য তিনি বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা নেন। এরপর শিক্ষক পরিষদ অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটি নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তির নাম করে টাকা নেওয়ার বিষয়ে কিছু সত্যতা পেয়েছে। তবে এ বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলও অবহিত ছিল। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে খুব একটা সত্যতা পায়নি। তদন্ত কমিটির প্রধান মাউশির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) আবদুল মালেক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

প্রশাসনের অংশ হিসেবে বর্তমান উপাধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাকের কক্ষেও তালা ঝুলছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটা দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ। শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী বললেন, অধ্যক্ষের সঙ্গে শিক্ষকেরা কাজ করতে চান না।

অধ্যক্ষ ঢাকায় অবস্থান করছেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য নেই।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। একাদশ শ্রেণির ছাত্র আরিফুল ইসলাম জানায়, ১২ মার্চ থেকে ক্লাস হচ্ছে না। গত মাসেও একাধিক দিন ক্লাস হয়নি।

যদিও একাধিক শিক্ষক বলেছেন, ক্লাস ও পরীক্ষা এখন তাঁদের কর্মসূচির বাইরে। হিসাববিজ্ঞনের স্নাতকোত্তর শেষ পর্বের ছাত্র রবিউল আলমের ভাষ্য, ‘শিক্ষকদের সমস্যায় আমাদের কেন সমস্যায় পড়তে হবে। সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ করা উচিত।’

Share