Current Date:Sep 25, 2024

পাইলট আবিদের স্ত্রীর কিডনি ফাংশন কমে আসছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ইউএস-বাংলার পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানমের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে আরও অবনতি হয়েছে।

আফসানা ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ কিনা জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলেছেন, তা এখনও সম্পূর্ণভাবে বলা যাবে না। তবে তার পরিস্থিতি অবনতির দিকে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার মতো অবস্থায়ও নেই।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম সাংবাদিকদের আফসানার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে অবহিত করেন।

তিনি বলেন, আজকের পরিস্থিতি ও গত কয়েক দিনের তুলনায় খারাপের দিকে। বিশেষ করে ওনার কিডনি ফাংশন কিছুটা কমে আসছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য প্যারামিটারও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চিকিৎসা চালিয়ে যাব, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি ভেন্টিলেশন সাপোর্ট নিতে পারেন।

চিকিৎসক জানান, আফসানার চিকিৎসায় অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে সাপোর্ট বেশি লাগছে। যেমন- ব্লাড প্রেসার তোলার জন্য যে সাপোর্টটা দেয়া দরকার, সেটি আরেকটু বাড়াতে হয়েছে। ব্লাড প্রেসারটা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

ডা. বদরুল বলেন, কিডনির যে আউটপুট বলি আমরা, সেটি ক্রমান্বয়ে কমছে। ওনার অবস্থা অবনতির দিকে। কিন্তু ভেন্টিলেশন উইথড্র করা বা সব সাপোর্ট উইথড্র করার মতো নয়। আগামীকালও চিকিৎসকরা যারা জড়িত, তা দেখবে।

তবে আফসানাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানান এ চিকিৎসক। তিনি বলেন, বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ যে পরিমাণ ভেন্টিলেশন তার দরকার, সেটি দেয়া সম্ভব হবে না।

শারীরিক অবস্থার অবনতি সত্ত্বেও আফসানার চিকিৎসার জন্য গঠিত ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চিকিৎসা অব্যাহত থাকবে।

এ মেডিকেল বোর্ডের প্রধান নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের পরিচালক অধ্যাপক কাজী দীন মোহাম্মদ।

তার কাছে জানতে চাওয়া হয় আফসানা ‘ক্লিনিকালি ডেড’ কিনা। এ ব্যাপারে এ চিকিৎসক বলেন, ওনার যেসব লক্ষণ দেখলাম, তাতে আমরা এখন সম্পূর্ণভাবে এটি বলতে পারব না। আমরা এখন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে তার পরিস্থিতি অনেকটা অবনতির দিকে।

ডা. দীন মোহাম্মদ জানান, আফসানার ডায়াবেটিস ছিল। স্বামীর মৃত্যুতে তিনি মানসিকভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত ছিলেন।

গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইউএস-বাংলার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে ক্রুসহ ৫১ জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর বিমানটির প্রধান পাইলট আবিদ আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পর দিন সকালে কাঠমান্ডুর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।

আবিদের এমন করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি স্ত্রী আফসানা। স্বামীকে হারিয়ে কখনও বাকরুদ্ধ কখনও অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন- তার স্বামী মারা যাননি, সবাই মিথ্যা কথা বলছে, আবিদ ফিরে আসবে, আবিদ তাকে সঙ্গে না নিয়ে একা চলে যেতে পারে না- এমন প্রলাপ বকতেন তিনি। স্বামীর শোকে মনস্তাত্ত্বিক চাপে রোববার নিজ বাসায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন। এর পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।

এর পর গুরুতর অবস্থায় আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আফসানাকে।

এদিকে সোমবার কাঠমান্ডু থেকে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ বাংলাদেশির সঙ্গে পাইলট আবিদ সুলতানের লাশও দেশে আসে।

এদিন বিকালে অশ্রুসজল একমাত্র সন্তান তানভীর বিন সুলতান যখন বাবার লাশ গ্রহণ করছেন, তখন হাসপাতালে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন মা আফসানা।

Share