স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয়টি হলো, এই সময়ে দলে সিনিয়র এবং তরুণ প্রজন্মের দারুণ মেলবন্ধন ঘটেছে। যা ভবিষ্যতে দলে জেনারেশন গ্যাপ সমস্যার টোটকা হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু সমস্যা হলো, এখনও তরুণ ক্রিকেটাররা ধারাবাহিক হতে পারছে না। দলের জয়ে অবদান রেখে চলছেন সিনিয়ররাই। তাহলে সমস্যা কোথায়?
জাতীয় দলের সবচেয়ে আলোচিত পাঁচ তরুণ তারকা হলেন মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং সাব্বির রহমান। এই পাঁচজনের সামর্থ্য নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এদের সবাইকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত তারকা বলে দেওয়া যায়। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই তারকাখ্যাতি পেয়ে গেছেন। কিন্তু পারফরমেন্সটাই ধারাবাহিক হচ্ছে না। শ্রীলঙ্কার মাটিতে সদ্য শেষ হওয়া নিদাহাস ট্রফিতেও তাদের পারফর্মেন্স ছিল অধারাবাহিক।
জাতীয় দলে হার্ডহিটারের যখন অভাব, তখন তরুণ ওপেনার সৌম্য সরকার সম্ভাবনার আলো দেখিয়েছেন। কিন্তু গত দুই বছর ধরেই তার ব্যাট অধারাবাহিক। পার্টটাইম মিডিয়াম পেস বোলিংটাও ইদানিং প্রায়ই করছেন। অধিনায়কেরা তার হাতে বল তুলে দিতে স্বস্তি পান। কিন্তু তার প্রধান যে কাজ ব্যাটিং, তাতে এখনও তিনি ফ্লপ। নিদাহাস ট্রফিতে ৫ ম্যাচে রান করেছেন মাত্র ৫০।
আরেক তরুণ হার্ডহিটার সাব্বির রহমান। বাংলাদেশের একমাত্র ‘টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট’ বলা হতো তাকে। নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে প্রচণ্ড চাপের মাঝে দাঁড়িয়ে ৫০ বলে ৭৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। কিন্তু আগের ম্যাচগুলোতে তার ব্যাটিং ছিল বিবর্ণ।
হার্ডহিটিং বলুন আর টেকনিক্যাল ব্যাটিং বলুন, লিটন দাসের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। নিদাহাস ট্রফিতেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার ১৯ বলে ৪৩ রানের টর্নেডো ইনিংস বাংলাদেশকে চালকের আসনে বসিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বাকী ম্যাচগুলোতে তার ব্যাটে রানের দেখা নেই। তরুণদের ব্যর্থতার মাঝে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে গেলেন মুশফিকুর রহিম। ৬৬.৩৩ গড়ে তার সংগ্রহ ১৯৯ রান। সমান ম্যাচে ৩০.৮০ গড়ে ১৫৪ রান করে দ্বিতীয় স্থানে আরেক সিনিয়র তামিম ইকবাল।
বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও তরুণদের অবস্থা শোচনীয়। মাশরাফির অনুপস্থিতিতে মুস্তাফিজকে পেস আক্রমণে নেতৃত্বে বসানোর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। কিন্তু গোটা সিরিজে তিনি অধারাবাহিক। একমাত্র অর্জন ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে তার সেই আলোচিত ওভার। ৭ উইকেট নিয়ে রুবেলের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে শীর্ষে থাকলেও মুস্তাফিজের ইকনোমি ৮.৮৫! যা তার নামের সঙ্গে মানানসই না।
আরেক তরুণ মেহেদী হাসান মিরাজ। এই স্পিনার কাম ব্যাটসম্যানকে অনেকেই বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসানের উত্তরসূরি হিসেবে দেখে থাকেন। কিন্তু নিদাহাস ট্রফিতে তার ইকনোমি ৭.২৫ হলেও উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১টি। তাসকিন, আবু হায়দার কিংবা নাগিন নাচের জনক নাজমুল- কেউই নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। বল হাতে ‘নেতা’ ছিলেন সেই সিনিয়র একজন- রুবেল হোসেন।
জাতীয় দলে তরুণদের এই হাল নিয়ে অনেক লেখালেখি, অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টিটা বাঁধতে পারছেন না কেউ। মানে তাদের এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এই মুহূর্তে জাতীয় দলে কোনো কোচ নেই। ভারপ্রাপ্ত কোচ কোর্টনি ওয়ালশের অধীনে নিদাহাস ট্রফিতে রানার্সআপ হয়েছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট শেষে ছুটিতে গেছেন ওয়ালশ। তাকেই স্থায়ীভাবে প্রধান কোচ করা হবে কিনা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে ওয়ালশ ফিরলে তরুণদের নিয়ে মিশনে নামার পরিকল্পনা আছে বিসিবির। দলের ভবিষ্যত তৈরির এই মিশন সফল হোক, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।