বিশেষ প্রতিবেদন : চলতি বছর সৌদি আরবে হজযাত্রী পরিবহণে থার্ড ক্যারিয়ার চায় হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ -হাব। এ জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম। অন্যদিকে আসন্ন হজে থার্ড ক্যারিয়ার চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে ধর্ম সচিবকে আগামী সপ্তাহে লিগ্যাল নোটিস পাঠানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হজযাত্রী ও হাজীকল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের।
হাব এবং হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদ মনে করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স ছাড়াও অন্য যেকোনো এয়ারলাইন্সে তথা থার্ড ক্যারিয়ারে হজযাত্রী পরিবহণে আর কোনো বাধা নেই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স ছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আর কোনো এয়ারলাইন্স হজযাত্রী পরিবহণ করতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরেই হজ এজেন্সির মালিক ও হজযাত্রীদের পক্ষ থেকে এ দুটি বিমানের বাইরে অন্যকোনো বিমান ব্যবহারের দাবি জানিয়ে আসলেও তা কার্যকর হয়নি। এ কারণে এ দুইটি এয়ারলাইন্সেই হজে যেতে বাধ্য হন হজযাত্রীরা। আর এ সুযোগে হজযাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া গুণছেন বলে হাব ও বিভিন্ন পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে।
এ প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল থার্ড ক্যারিয়ার চালুর দাবি জানিয়ে রেজাউল ইসলাম নামে এক হজযাত্রী হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে থার্ড ক্যারিয়ার চালুর পক্ষে মত দেন। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। এ আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে তখন থার্ড ক্যারিয়ার চালুর বিষয়টি স্থগিত করেন আদালত। সর্বশেষ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আপিল খারিজ করে দেওয়া হয়।
এ রায়ের ফলে হজযাত্রী পরিবহণে থার্ড ক্যারিয়ার চালুতে আর কোনো বাধা নেই বলে আমার সংবাদকে জানান, হজযাত্রী ও হাজীকল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের। গতকাল হজ নীতিমালাতেও থার্ড ক্যারিয়ার চালুর কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, হজযাত্রী ও হাজীকল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে আগামী সপ্তাহেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবকে লিগ্যাল নোটিস প্রদান করা হবে। আমরা ধর্ম সচিবকে আসন্ন হজে থার্ড ক্যারিয়ার চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাবো। তিনি যদি এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা না নেন তাহলে প্রয়োজনে আমরা আদালত অবমাননার মামলা করবো।
এদিকে, ২০১৮ সালের হজনীতিমালার তৃতীয় অধ্যয়ের ১০.১.১ অনুচ্ছেদ থেকে জানা যায়, ‘হজযাত্রী পরিবহণের প্রয়োজনে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স ছাড়াও ঢাকা/চট্টগ্রাম/সিলেট-জেদ্দা/মদিনার পথে সরাসরি হজযাত্রী পরিবহণে ইচ্ছুক মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সুনামের অধিকারী প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য এয়ারলাইন্সে হজযাত্রী পরিবহণের ব্যবস্থা করতে পারবে’।
গতকাল বিকালে বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম আমার সংবাদকে বলেন, হজযাত্রী পরিবহণে থার্ড ক্যারিয়ার চেয়ে ইতোমধ্যে আমরা বিমান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। আবেদনে আমরা এ বছর থেকেই থার্ড ক্যারিয়ার চেয়েছি। এটি হলে হজযাত্রী পরিবহণে এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। এতে ভাড়া কমে আসবে বলে আশা করি। রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় এ ব্যাপারে ধর্ম সচিব ও বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন সচিবের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এখনো অনিবন্ধিত ৪৬৮৬৮ হজযাত্রী, ১ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি : এদিকে ২০১৮ সালে হজব্রত পালন করতে ইচ্ছুক হজযাত্রীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া দ্বিতীয় দফা আগামী ১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ তারিখের পর আর বাড়ানো হবে না জানিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ) এস.এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ‘উল্লিখিত তারিখের পর হজ ও ওমরাহ নীতি ১৪৩৯ হিজরি/২০১৮ খ্রি:-এর ৩.১.৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে পরবর্তী ক্রমিক থেকে নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। সেক্ষেত্রে পূর্ব ঘোষিত ক্রমিকের প্রাক-নিবন্ধিত আর কেহ নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন না।’
এ বছর সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে মোট হজযাত্রী এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাত হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন এক লাখ ২০ হাজার জন। গতকাল সন্ধা পর্যন্ত পূর্বনির্ধারিত সময়সীমার শেষদিনে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮৩৬ জন এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা ৭৪ হাজার ৪৯৪ জন বলে আমার সংবাদকে নিশ্চিত করেন হজ নিবন্ধনে সহায়তাকারী আইটি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশনের সমন্বয়ক কবির আল মামুন। সে হিসাবে এখনো হজযাত্রী নিবন্ধন বাকি রয়েছে সরকারি কোঠায় এক হাজার ৩৬২ জন এবং বেসরকারি কোঠায় ৪৫ হাজার ৫০৬ জন।
গত ১ মার্চ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং ৬ মার্চ থেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হয়। প্রথম দফায় নিবন্ধনের সময়সীমা ছিল ১৮ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু, বিপুলসংখ্যক হজযাত্রী অনিবন্ধিত থেকে যাওয়ায় ৪ দিন বাড়িয়ে ২২ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দেয় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ সময়েও সরকারি-বেসরকারি কোঠার মোট ৪৬ হাজার ৮৬৮ জন হজযাত্রী অনিবন্ধিত থেকে যাওয়ায় ১ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়।
পাসপোর্ট জটিলতার কারণে হজযাত্রী নিবন্ধন কার্যক্রম গতি পাচ্ছে না বলে মনে করেন হাব মহাসচিব শাহাদত হোসেন তসলিম। আর হজযাত্রী ও হাজীকল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, আমাদের দেশে ৮০-৯০ শতাংশ হাজি দালালদের মাধ্যমে আসে। দালালরা এজেন্সিকে টাকা দিচ্ছে না, তাই নিবন্ধনে দেরি হচ্ছে। তবে আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে সব হজযাত্রীর নিবন্ধন সম্পন্ন হবে বলে মনে করেন তিনি।