স্পোর্টস ডেস্ক : তৌহিদুল আলম সবুজের কথা মনে আছে? ২০১০ এসএ গেমসে ভারতের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল করে যে স্ট্রাইকার বাংলাদেশকে তুলে নিয়েছিলেন ফাইনালে। ঘরের মাঠে শিরোপা মঞ্চে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও করেছিলেন গোল। প্রায় আট বছর আগের সেই সবুজকে ভুলে যাওয়ারই কথা। থাইল্যান্ডে প্রস্তুতি ম্যাচে আজ বাংলাদেশের জার্সিতে হ্যাটট্রিক করে স্মরণ করিয়ে দিলেন, তাঁর পায়ে এখনো মরিচা ধরেনি। হোক না প্রস্তুতি ম্যাচ, জাতীয় দলের জার্সিতে বিদেশি দলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক বলে কথা!
সবুজের হ্যাটট্রিকের সুবাদে থাই প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ব্যাংকক গ্লাস এফসির বিপক্ষে ৪-৩ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অন্য গোলটি সুফিলের। ২৭ মার্চ লাওসের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের আগে জয়টা যেমন বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে, ঠিক তেমনি হ্যাটট্রিকটাও তো সবুজকে জোগাবে বাড়তি অনুপ্রেরণা। গত ১৯ জানুয়ারি জন্ম হয়েছে তাঁর প্রথম সন্তান তারাজ আলম রাফানের। জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম হ্যাটট্রিক দুই মাস বয়সী ছেলেকে উৎসর্গ করলেন বাংলাদেশের জয়ের নায়ক।
২০১০ এসএ গেমসে অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলের জার্সিতে খেলার পরবর্তী সময়ে দুই বছর জাতীয় দলে খেললেও অনিয়মিত হয়ে পড়েন সবুজ। শেষ জাতীয় দলে মাঠে নেমেছিলেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ২০১৫ সালে। এরপরে লোডভিক ডি ক্রুইফের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক দলে থাকলেও চূড়ান্ত দলে আর জায়গা হয়নি।
কিন্তু এবার তার জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা অনুমিতই ছিল। লিগে ৮ গোল করে দেশীয়দের মধ্যে হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। এর মধ্যে টানা পাঁচ ম্যাচে গোল আছে চট্টগ্রাম আবাহনীর এই স্ট্রাইকারের। এমন স্ট্রাইকারকে উপেক্ষা করতে পারেননি বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়ান কোচ অ্যান্ড্রু ওর্ড। তাই প্রায় তিন বছর পরে জাতীয় দলে ফিরেই জানিয়ে দিলেন, তিনি তৈরি।
সুফিলের ইনজুরিতে বদলি হিসেবে আজ নেমেছিলেন ১৬ মিনিটের সময়। গোলের খাতা খুলতে সময় নিয়েছেন মাত্র ১৪ মিনিট। আর হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছেন ৮২ মিনিটে। মাঝের গোলটি ৪২ মিনিটে। গোল তিনটিও দুর্দান্ত।
ম্যাচ শুরুর ৭ মিনিটে সুফিলের গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ১০ মিনিট পরেই বাংলাদেশের রক্ষণভাগের ভুলের সুযোগ নিয়ে সারেপিমের গোলে সমতায় ফিরে স্বাগতিকেরা। এরপরই দেখা যায় সবুজ-জাদু। ৩০ মিনিটে বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে আলতো করে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে ব্যবধান ২-১ করেছেন। ৪২ মিনিটে তাঁর দ্বিতীয় গোলটি দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে। বাঁ প্রান্ত থেকে আসা জাফরের ক্রস দেখেশুনে পোস্টে রাখলে ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
কিন্তু বিরতি থেকে ফিরেই থাইরা কোণঠাসা করে ফেলে বাংলাদেশকে। জোড়া গোল করে ৩-৩ সমতা করেন থাই স্ট্রাইকার ল্যাবরাটোল। ২৩ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের গোল দুটি ৭৭ ও ৮১ মিনিটে। তবে থাইরা সমতায় ফিরে উল্লাস করার আগেই হ্যাটট্রিক ও জয়সূচক গোলটি করেছেন সবুজ। শেষ গোলটি আগুয়ান গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে নিখুঁত নিশানায়।
তবে হ্যাটট্রিক করেও খুব বেশি উচ্ছ্বাস দেখালেন না সবুজ। লাওসের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়েই বললেন কথা, ‘গোল করলে এমনিতেই ভালো লাগে। সেখানে হ্যাটট্রিক তো অনেক বড় বিষয়। তবে দল জেতাতেই আমার সবচেয়ে বেশি খুশি। লাওসের বিপক্ষে গোল করতে হবে। লাওসের বিপক্ষে গোল না করতে পারলে আজকের হ্যাটট্রিকের কোনো দাম নেই। এই ম্যাচটা আমাদের দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
২৭ মার্চ ভিয়েনতিয়েনে অনুষ্ঠিত হবে প্রীতি ম্যাচটি।