অনলাইন ডেস্ক : কাল থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। জানি, পরীক্ষার্থীদের ভেতর নানা দুশ্চিন্তা কাজ করছে। কেবল গুরুগম্ভীর উপদেশ কিংবা উচিত-অনুচিতের লম্বা তালিকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে তোমাদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিতে চাই না। তার চেয়ে চলো, পরীক্ষা নিয়েই একটু গল্প করা যাক।
তখন আমার এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। মনের মধ্যে স্বভাবতই অনেক দুশ্চিন্তা, কী হবে না হবে কিছুই বুঝতে পারছি না। দূরদূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজন ফোন করে বলছে, ‘একদম টেনশন কোরো না’। তাঁদের কথায় ‘টেনশন’ বেড়ে যাচ্ছে আরও। ভাবছি কত মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে, কী হবে! তার ওপর আমার কিছু ন্যাকা বন্ধু প্রায়ই ফোন করে বলছে, ‘দোস্ত, আমি তো কিচ্ছু পারি না। ফেইল করব। কী করি!’ অথচ আমি নিশ্চিত, সে পুরো সিলেবাস দু–চারবার ভাজা ভাজা করে বসে আছে! চোখ বন্ধ করে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে যাবে।
প্রথম দিন পরীক্ষা দিতে গেছি। হলের কাছাকাছি গিয়ে দেখি আমার এক পরিচিত বন্ধু গাড়ি থেকে নামছে। ওদের আবার বিশাল নোয়াহ মাইক্রো, ভাবটাই আলাদা! মাইক্রো থেকে এক এক করে ছেলেটার মা, বাবা, নানি, নানা, দাদি, চাচাসহ আরও কয়েকজন আত্মীয়স্বজন নামলেন। সাত–আটজনের এই ছোট্ট দলটার কারও মুখে হাসি নেই। ভাবভঙ্গি এতই ‘সিরিয়াস’, দেখে মনে হচ্ছিল তারা যুদ্ধ করতে এসেছে। আমি বুঝলাম, বন্ধুর অবস্থা বড়ই শোচনীয়!
এই ফাঁকে তোমাদের একটা তথ্য দিই, শোনো। তোমরা যখন হাসো, তখন একধরনের হরমোন কাজ করে। হরমোনের নাম হচ্ছে ডোপামিন। ডোপামিনের প্রভাবে তোমার ভালো লাগতে শুরু করে, ‘নার্ভাসনেস’ ব্যাপারটা তুমি বেমালুম ভুলে যাও। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। আমার মনে আছে, পরীক্ষার হলে আমার হাসি দেখে বন্ধুরা নার্ভাস হয়ে যেত। ভাবত আমি সব পারি, আর ওরা বোধ হয় কিছুই পারে না। ওদের গোবেচারা চেহারা দেখে আমার আরও হাসি পেত। পরীক্ষার বাকি ভয়টুকুও চলে যেত।
তো এই গল্পটা থেকে আমরা কী কী শিখলাম?
১. পরীক্ষার আগে ফোন থেকে ১০০ হাত দূরে থাকো। (আর হ্যাঁ, যেসব বন্ধু কিংবা পরিচিতজন পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কি হয়নি, এসব নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকে, তাদের থেকে ২০০ হাত দূরে থাকো।)
২. যদি সম্ভব হয় তো পরীক্ষা দিতে একাই যাও। প্রয়োজন হলে মা বা বাবা কাউকে সঙ্গে নিতে পারো। তবে তাঁদের দুশ্চিন্তা যেন তোমার পরীক্ষার ওপর কোনো রকম প্রভাব না ফেলে।
৩. পরীক্ষার হলেও তোমার ডোপামিন হরমোনকে কাজে লাগাতে ভুলো না। বন্ধুদের হাসতে হাসতে বলো যে আজকের চাইতে ভালো প্রস্তুতি আগে কোনো দিনই তোমার ছিল না!
আমার এখনো মনে আছে, আমার সময়ে এইচএসসির প্রতিটা পরীক্ষার পরই নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নগুলোর উত্তর মেলানোর একটা হিড়িক পড়ে যেত। কার কয়টা ঠিক হলো আর কয়টা ভুল হলো, সে হিসাব মেলাতে গিয়ে পরের পরীক্ষার অবস্থাও হয়ে যেত একেবারে যাচ্ছেতাই। অতি উৎসাহী কেউ কেউ এরই মধ্যে তাঁদের সুদূরপ্রসারী ভাবনা জানান দিতে শুরু করত। এইচএসসির পর কোন কোচিংয়ে, কোন ব্যাচে পড়বে…ইত্যাদি। মনে আছে আমার বন্ধু সাদাতের কথা। প্রতি পরীক্ষার পরেই ও সবাইকে বলত, ও নাকি ফেল করবে। আর ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ওর দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। ওদের এত শত চিন্তার ভিড়ে আমি হারিয়ে যেতাম এই ভেবে যে আমার মাথায় কেন এত চিন্তা আসে না!
এবার তোমাদের কিছু পরামর্শ (উপদেশ বললে একটু ভারিক্কি শোনায়!) দেওয়া যাক।
১. যে পরীক্ষাটা হয়ে গেছে তার ‘ময়নাতদন্ত’ করার কোনো প্রয়োজন নেই। একটা পরীক্ষা খারাপ হলে সেটার কথা ভেবে ভেবে তুমি পরের পরীক্ষাটাও কেন খারাপ করবে!
২. পরীক্ষার এই সময়টাতে আপাতত ভর্তি পরীক্ষা, গোল্ডেন এ প্লাস, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কত পয়েন্ট লাগে, কোন কোচিংয়ে পড়বে…এসব সুদূরপ্রসারী ভাবনার কোনো দরকার নেই। মনোযোগ যেন শুধু পরীক্ষার ওপরই থাকে।
৩. ভালো করে রিভিশন দেওয়া, টেস্ট পেপার থেকে প্রশ্ন দেখে যাওয়া, কঠিন বিষয়গুলো বারবার অনুশীলন করা…এই উপদেশগুলো একেবারেই না দিলে খারাপ দেখায়। তাই এক ফাঁকে একটু মনে করিয়ে দিলাম আরকি!
তোমাদের সবার জন্য শুভকামনা।