নিজস্ব প্রতিবেদক : বাসা বাড়িতে কারও অসচেতনতার কারণে এডিস মশার প্রজনন হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে শাস্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি জানান, শাস্তি হিসেবে জরিমানার পাশাপাশি হতে পারে কারাদণ্ডও।
আগামী ৮ এপ্রিল থেকে বাড়িতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র খুঁজতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন মেয়র।
সোমবার নগর ভবনের ব্যাংক ফ্লোরে এক মতবিনিময় সভায় এই হঁশিয়ারি দেন সাঈদ খোকন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮ তম জন্মদিন উপলক্ষে গত ১৭ মার্চ থেকে নগরীতে পরিচ্ছন্নতার বিশেষ অভিযান ‘স্বচ্ছ ঢাকা’ কর্মসূচির আওতায় চিকনগুনিয়া প্রতিরোধ এবং এডিস মশক নিধনে করণীয় নির্ধারণে এ সভার আয়োজন করা হয়।
মশাবাহিত দুই রোগ ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার বিস্তারের জন্য দায়ী এডিস মশার জন্ম নালা বা জলাশয়ের নোংরা পানিতে হয় না। এই মশাগুলো বাসা-বাড়িতে জমিয়ে রাখা পরিষ্কার পানিতেই জন্ম হয়। ফুলগাছের টব, খালি ক্যান বা ঘরের ভেতরের অন্যান্য খালি কৌটাতেও ডিম পারে এই মশাগুলো।
এক দশক খরে ডেঙ্গু এবং গত বছর থেকে চিকুনগুনিয়ার বিস্তারের পর থেকে নগর কর্তৃপক্ষ শহরবাসীকে এসব বিষয়ে সচেতন করতে নানাভাবে প্রচার চালিয়ে আসছিল। এবারই প্রথম আসল শাস্তির হুমকি।
মেয়র বলেন, ‘আমরা আগামীকাল মঙ্গলবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করব। সব নাগরিক যেন তার বাসা পরিচ্ছন্ন রাখেন। ৮ এপ্রিল থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব আমরা।’
‘যেসব ভবনে এডিসের প্রজনন ক্ষেত্র কিংবা লার্ভা পাওয়া যাবে, তাকে অর্থদণ্ড কিংবা কারাদণ্ড কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ডিএসসিসির আইন ২৬৯-৭০ আনুযায়ী এই জরিমানা করা হবে।’
মেয়র বলেন, ‘গণবিজ্ঞপ্তি জারি করব, আমরা সবাইকে নোটিশ দেব। আপনারা নাগরিকরা অনুগ্রহ করে বাড়ি ঘর পরিষ্কার রাখবেন। কোন অবস্থায় যেন এডিস মশা জন্ম নিতে না পারে।’
সেমিনারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশন বিভিন্ন কাজ করছে। কিন্তু এই কাজগুলো সঠিকভাবে চলছে কি না সেজন্য তদারকি সেল করতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিও নিতে হবে।’
চলতি বছর রাজধানীতে ডেঙ্গুর বেশি আশঙ্কা রয়েছে বলেও মনে করেন কবিরুল বাশার।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘আমি মশা মারব, কিন্তু প্রতিবেশী মারবে না, তাহলে লাভ হবে না। তাই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি অফিসসহ সবার জন্য কঠোর নির্দেশ দিতে হবে-যদি কারো ছাদে অপরিষ্কার পানি পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘মশা যেখানে ডিম পাড়ে সেখানেই মারণফাঁদ তৈরি করতে হবে। তাহলে মশাদের প্রজনন হবে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশও তাই করছে।’
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী খান মোহাম্মদ বিল্লাল, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নুজহাত নাসরীন এবং সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।