স্পোর্টস ডেস্ক : কাচ ঘেরা কক্ষ, তাই বাইরে থেকেও স্পষ্ট দেখা যায় সবকিছু। বুধবার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুশীলন শেষে সেই কক্ষেই বাংলাদেশ দলের লিডারশিপ গ্রুপের বৈঠক। অন্তবর্তীকালীন কোচ কোর্টনি ওয়ালশ, ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ, নির্বাচক হাবিবুল বাশারের সঙ্গে দেখা গেল সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম ইকবালকেও। সভার মূল আলোচ্য বিষয়, ভয়কে জয় আর দ্বিধার বাধা সরানো। নতুন অভিযানে নব উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়া।
ওই সভা শেষ করেই মাহমুদউল্লাহ এলেন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে। যেখানে বাংলাদেশ অধিনায়কের কণ্ঠে ঘুরেফিরে বারবার ফুটে উঠল এই কথাগুলোই। সময়টা হতাশার, মানছেন অধিনায়ক। তবে দূর করতে চান সেই হতাশার মেঘ। চাপ প্রবল, অনুভব করছেন। সেই চাপ সরিয়ে শ্বাস নিতে চান স্বস্তির হাওয়ায়।
এমনিতে কাজটা কঠিন। সময়টা খারাপ বাংলাদেশ ক্রিকেটের। কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের আচমকা বিদায়ের পর এখনও পাওয়া যায়নি একজন প্রধান কোচ। সেই হাথুরুসিংহের দলের বিপক্ষেই দেশের মাটিতে সিরিজে তিন সংস্করণে হার। মাঠের-ভেতর বাইরে আরও নানা বিতর্ক। এমন দুঃসময়ে যোগ হয়েছে সাকিব আল হাসানের চোট। দলের অধিনায়ক ও সেরা ক্রিকেটারকে ফিরে পাওয়া অপেক্ষা কেবল হচ্ছে দীর্ঘতর।
তবে হতাশার শেষ বিন্দু থেকেই অনেক সময় শুরু হয় নতুন আশার। নতুন কিছুর রোমাঞ্চ অনেক সময়ই সঞ্চার করে নতুন প্রাণশক্তির। ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ কোর্টনি ওয়ালশ দলের পুরোনো সদস্য হলেও এখনকার দায়িত্বে নতুন। জাতীয় অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহর প্রথম সফর। নতুন টুর্নামেন্টের অভিযানে এত নতুনের মেলায় তাই নতুন কিছুর হাতছানিই দেখছেন অধিনায়ক।
“ফলাফলের কথা বললে, অবশ্যই সাম্প্রতিক সময়টা ছিল হতাশার। আমাদের সামর্থ্য নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স নিয়ে। তবে সেই হতাশাকে পাশে ঠেলে আমরা এগোতে চাই। এটি নতুন একটি টুর্নামেন্ট। ভালো কিছু করতে আমরা আশাবাদী। ছেলেরা বেশ আত্মবিশ্বাসী।”
“প্রস্তুতি ম্যাচটিতে আমাদের অনুশীলন বেশ ভালো হয়েছে। এখানকার কন্ডিশনও আমাদের জানা। মাঠে নামতে আমরা মুখিয়ে আছি। আশা করি আমরা দায়িত্ব নিয়ে নিজের জন্য ও দলের জন্য ভালো কিছু করব। অবশ্যই বলছি না যে আমরা ফেভারিট। আমরা যেটা করতে পারি, প্রক্রিয়াটা ঠিক রেখে মাঠে দারুণ ক্রিকেট খেলতে পারি। সেটিই করতে চাইব আমরা।”
সময় খারাপ বলেই শুধু নয়, এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটি কঠিন এই সংস্করণর কারণেও। র্যাঙ্কিংয়ে আফগানিস্তানেরও পেছনে থাকা বলে দেয়, টি-টোয়েন্টির ভাষা এখনও বাংলাদেশের কাছে কতটা দুর্বোধ্য। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে ওমানের বিপক্ষে জয়টির পর এখনও পর্যন্ত ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশর জয় কেবল একটি!
এই চ্যালেঞ্জই নিতে চান মাহমুদউল্লাহ। জবাব দিতে চান লড়িয়ে মানসিকতা দিয়ে। ভরসা রাখছেন সতীর্থদের ওপর।
“আমরা শেষ ১০ টি-টোয়েন্টির (১৩টির) একটি জিতেছি মাত্র। চাপ তাই থাকবেই। সেটা আমরা অনুভবও করছি। যেহেতু আমরা ভালো করছি না, চ্যালেঞ্জ তাই থাকবেই। সেই চ্যালেঞ্জটিই আমরা নিতে চাই। প্রতিটি ম্যাচই নতুন চ্যালেঞ্জ। আমাদের চাওয়া ছেলেরা দায়িত্ব নিয়ে, বিশ্বাস নিয়ে খেলুক। যে দিনটিতে যে দাঁড়িয়ে যাবে, সে যেন দলকে জিতিয়ে ফেরে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে আমরা পারব। আমাদের সেই সামর্থ্য আছে।”
দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের ময়নাতদন্ত করে একটি ঘুনপোকার সন্ধান পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। যে পোকার নাম, ‘সংশয়’। নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে সংশয়। হারার আগেই হারের ভয়। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের বিশ্বাস, এই সংশয়ের ঘুণপোকাই খেয়েছে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস।
এই ঘুণপোকা প্রশ্রয় পেয়েছে যে দলের বিপক্ষে, সেই শ্রীলঙ্কার মাটিতেই সেটি নির্মূল করতে চান মাহমুদউল্লাহ। গত কয়েক বছরে যে ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলে সাফল্যের জোয়ারে ভেসেছে বাংলাদেশ, এবারও সেই ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে চান অধিনায়ক।
“একটা কথা আমরা বলেছি যে, মনে যেন সংশয় না থাকে। যে কোনো ম্যাচে সংশয় নিয়ে মাঠে নামলে তা কখনোই দলকে সাহায্য করে না। দল খারাপ করলে নিজেদের মনে অনেকে সংশয় ঢুকে যায়। অনেক কিছু আসে মাথায়। এজন্যই দলকে বলেছি, সংশয়গুলো সরিয়ে যেন তরতাজা হয়ে মাঠে নামতে পারি। সবশেষ সিরিজ যেন আমরা মাথায় না রাখি।”
“গত কয়েক বছরে আমরা যে ক্রিকেট খেলেছি, সেভাবেই খেলব। শুধু একটি সিরিজ হেরেছি বলে সেখান থেকে সরে আসার মানে হয় না। হয়ত ব্যাটসম্যান বা বোলাররা কিছুটা আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে। যদি আমরা সেই আত্মবিশ্বাস ফেরাতে পারি, আমার মনে হয় ভালো কিছু করা সম্ভব।”
সেই ভালো কিছু করার অভিযান শুরু বৃহস্পতিবার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ও এরপর দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে দুঃসময়ের প্রতিটি প্রহর, মাঠের বাইরে-বাইরে নানা বিশৃঙ্খলায় ছন্নছাড়া অবস্থা, সব মিলিয়ে অনেকটাই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে দলের।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কেবল সামনে এগোনোই সম্ভব। মাহমুদউল্লাহর বাংলাদেশের দৃষ্টি নিবদ্ধ সেই উজ্জ্বল আগামীতে।