অনলাইন ডেস্ক : ‘প্রহসনমূলক’ নির্বাচন না হয়ে ‘সুষ্ঠু’ ভোট হলে বামদের ‘প্রকৃত শক্তি’ বোঝা যাবে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
বুধবার রাজধানীতে আট বাম দলের সমন্বয়ে নতুন জোট ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’আত্মপ্রকাশের সময় বিভিন্ন নির্বাচনে বাম দলের প্রার্থীদের ন্যূনতম ভোট পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন রাখেন একজন গণমাধ্যম কর্মী। এর জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
এই জোট মুক্তিযুদ্ধের ‘প্রকৃত চেতনায়’ ‘জনগণের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার’ আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তাদের কী ক্ষমতা আছে, এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বাম দলগুলোকে তো জনগণ ভোট দিচ্ছে না, জনগণের মধ্যে যদি অবস্থান না থাকে, তাহলে আপনারা কী করতে পারবেন- এমন প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘নির্বাচন যদি প্রহসনমুলক হয়, প্রহসনের হিসাব নিকাশ করে আপনি জনপ্রিয়তা যাচাই করতে পারবেন না, আমাদের জনসমর্থন কোনোদিন খুঁজে পাবেন না।’
গত ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দেয়া ছয় লাখ ৩০ হাজার ভোটারের মধ্যে সিপিবির কাজী মো. রুহুল আমীন সমর্থন পেয়েছেন ৯৭৩ জনের। সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তার অবস্থান সবার নিচে।
বামপন্থী অন্য কোনো দল এখানে প্রার্থী দেয়নি। যদি ধরে নেয়া হয়, তাদের অনুসারীদের ভোটও পেয়েছেন সিপিবির প্রার্থী, তাহলে সেটি গোটা বামপন্থী রাজনীতির আবেদন হারানোর প্রমাণ হিসেবেই দেখা যায়।
গত ১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৫৩৪ ভোট পেয়ে সবার তলানিতে ছিলেন সিপিবির মিজানুর রহমান বাবু।
এর আগে ২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সিপিবি-বাসদ-এর সম্মিলিত প্রার্থী বজলুর রশিদ ফিরোজ এক হাজার ২৯ ভোট পেয়ে জামানত হারান।
সে সময় ঢাকা উত্তরে একই জোটের আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন দুই হাজার ৪৭৫ ভোট এবং আওয়ামী লীগের শরিক জাসদের নাদের চৌধুরী পান এক হাজার ৪১ ভোট।
এমনকি আলোচনায় না থাকা ধর্মভিত্তিক দলগুলোও এখন বামপন্থী দলের চেয়ে ভালো ভোট পাচ্ছে।
সেলিম বলেন, ‘আমাদের জনসমর্থন রাজপথে। আমাদের জোটের শরিক দলগুলোর উদ্যোগে গত এক বছরে একাধিক হরতালসহ, অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সরকারের দমন নীতি আমাদের কর্মীদের উপর এসেছে, এখনও আমাদের কর্মী হাসপাতালে শায়িত আছে।’
‘যদি আমাদের শক্তি যদি এতই দুর্বল হতো, তাহলে শাসক শ্রেণি আমাদের ওপর এতো নিপীড়ন চালাতো না। সুতরাং আমাদের শক্তি সম্পর্কে অতিরিক্ত মনোভাবও করি না, কিন্তু আমরা জানি জনগণের মনের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষাটা আছে, সেই আকাঙ্ক্ষাটা আমরা প্রতিধ্বনিত করি এবং সেটাকে ভোটের সংখ্যায় রূপান্তরিত করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে।’
নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের জামানতের টাকা বাড়ানোরও সমালোচনা করেন সেলিম। বলেন, ‘আমরা দাবি করেছিলাম এটা কমাতে হবে। কমানো তো দূরের কথা সেটা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার তারা চিন্তাভাবনা করছে। আমরা বলতে চাই এই ধরনের গরিব মানুষের স্বার্থ বিরোধী কোন সিদ্ধান্ত নিলে আমরা সেই নির্বাচন করব না এবং সেই দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।’
যত ভোটার ভোট দেন তাদের মধ্যে শতকরা সাড়ে আট শতাংশ না পেলে জামানতের টাকা ফেরত দেয় না নির্বাচন কমিশন। যার খুশি তার প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে এই উদ্যোগ আছে কমিশনের। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ভোট ছাড়া সিপিবি এককভাবে কোনো নির্বাচনেই আর জামানত রক্ষার মতো ভোট পায়নি।
তবে সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লিগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন মিলে দেশের রাজনীতি পাল্টে দেয়ার স্বপ্ন দেখছে এবার।