আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে: ফখরুল

0
78

ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বিএনপিকে বিপর্যস্ত করতে ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছেন শেখ হাসিনা। মঈন-ফখরুদ্দীন যে কায়দায় বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেছিল সেই একই কায়দায় এখন পুনরায় বিছানো হচ্ছে ষড়যন্ত্রের জাল। বিএনপির বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করা হবে। এরই অংশ হিসেবে সরকারের সংস্থাগুলো নানামুখি তৎপরতায় যুক্ত হয়ে পড়েছে।

রবিবার সকালে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে -বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে দলীয় গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সর্বসম্মত প্রস্তাবে বিলুপ্ত ৭ নম্বর ধারার অনুরূপ একটি ধারা নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিও তে সংযোজন করার অপচেষ্টা চলছে। এরপর ওই ধারার দোহাই দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরানোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের কড়া সমলোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১১ জুলাই জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসংসদীয় কটুবাক্যের ধারাবর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন-বিএনপি গঠনতন্ত্রে ৭ ধারা পরিবর্তন করলো কেন? প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য উদ্ভট, অলীক ও অন্তসারশূন্য। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিএনপি এবং দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসত্য, বানোয়াট অপপ্রচার। বিএনপি গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা গত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের দ্বারা সংশোধিত। আকস্মিকভাবে কয়েকদিন ধরে বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরই মধ্যে এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক ও সুদুরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ।

তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত থেকে দুর্নীতির দায়ে ১৩ বছরের সাজা পেয়েও আদালতকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এখনো সংসদে, মন্ত্রীসভায় এবং আওয়ামী লীগে তার সদস্যপদ ও নেতৃত্ব বহাল রেখেছেন। অথচ সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র নিয়ে কাল্পনিক সিন্ডিকেট-সংবাদ পরিবেশন করার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর একই রকম বক্তব্যে প্রমানিত হয়-সরকার বিএনপি, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুটিল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো-বিএনপি গঠনতন্ত্র থেকে যে ধারা বিলুপ্ত করেছে তার সঙ্গে মিল রেখে অনুরূপ একটি ধারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিওতে) অন্তর্ভূক্ত করার ক্ষেত্র তৈরি করা। বিএনপির পক্ষ থেকে আমি দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বিলুপ্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অপপ্রচার ও সরকারি ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির সুপারিশ অনুয়ায়ী, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে ৭ম ধারা বাতিলসহ দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়। যা পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের দলের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য ওই কাউন্সিলে দলীয় গঠনতন্ত্রের অংশে দলের সদস্যপত্র আবেদন সংশোধন করে ‘আমি কখনও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না’ এই বাক্যটি সংযোজন করা হয়। আমাদের জানা মতে, কোনও দলের গঠনতন্ত্রে সদস্যপদ লাভের জন্য এমন ঘোষণা দেওয়ার বিধান নেই।’

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার কারণেই বারবার দাবি জানানোর পরও বেগম জিয়াকে চিকিৎসা দিচ্ছে না এমন মন্তব্য করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, কতটা বর্বরোচিত এই দানবীয় সরকার, বেগম জিয়ার উপর তারা যে অমানবিক আচরণ করছে এটি কোন সভ্য দেশে চলতে পারে না। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই বেগম জিয়ার কিছু হলে সম্পূর্ণ দায় এই অবৈধ সরকারকে নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.আব্দুল মঈন খান,সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী,প্রশিক্ষন বিষয়ক সম্পাদক এবি এম মোশাররফ হোসেন,সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।