বগুড়া প্রতিনিধি : রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর দুর্গম চর বাগডহড়া থেকে পুরাতন জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের ৪ নেতাকে ভারী আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা এবং বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রোববার দুপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
তবে অভিযানের আগেই ঘটনাস্থল থেকে জঙ্গি সংগঠনটির বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক এবং রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের শীর্ষ নেতাসহ ৫ জঙ্গি পালিয়ে গেছে।
অভিযানের প্রায় ২৪ ঘন্টা পর সোমবার দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা তার কার্যালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। গ্রেফতার ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববারই বগুড়ায় আনা হয়। সোমবার তাদের রংপুরের আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন- পুরাতন জেএমবির রংপুর জেলার দাওয়াহ্ বিভাগের প্রধান ও জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার কুড়িবিশা দোলাপাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে আজহারুল ইসলাম ওরফে ওয়ানুর (৩২), সংগঠনের গঙ্গাচড়া উপজেলার দাওয়াহ্ বিভাগের প্রধান স্থানীয় বাগডহড়া গ্রামের নৈয়ব আলীর ছেলে আকরামুজ্জামান মুকুল (২৬), জেলার ইছাবার (সামরিক) দুই সদস্য স্থানীয় চর বাগডহড়া গ্রামের মমিন আলীর ছেলে ফারুক ওরফে সাজু (২২) ও আব্দুস সামাদের ছেলে আব্দুল হাকিম ওরফে মিলন (৩৪)।
পুলিশ তাদের কাছ থেকে একটি সচল বিদেশি একে-২২ বোর রাইফেল, একটি ম্যাগজিন, ২টি বিদেশি ৭.৬৫ পিস্তল, ৩টি ম্যাগজিন, ১৫ রাউন্ড একে-২২ বোর রাইফেলের গুলি, ২টি বর্মিজ চাকু এবং নগদ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর ফিরোজ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে গঙ্গাচড়া থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসামিদের রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। মামলাটি বগুড়ার গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করবে।
পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, প্রায় এক বছর আগে থেকে জঙ্গিরা লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা সীমান্ত সংলগ্ন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলাধীন তিস্তা নদীর চর বাগডহড়া এলাকায় গোপন ঘাঁটি গড়ে তোলে। সেখানে পুরাতন জেএমবির বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক খোরশেদ আলম ওরফে মাস্টার (৩৮), রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দাওয়াহ্ শাখার প্রধান শহিদুল্লাহ্ ওরফে ইয়ামিন (৪৫), রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ইছাবা সদস্য নূর হক ওরফে ওমর (৩০), রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার দাওয়াহ্ শাখার প্রধান ফুয়াদ ওরফে নিয়াজ (৩২) ও চট্টগ্রাম বিভাগের দাওয়াহ্ শাখার প্রধান হাদী (৩৮) একাধিবার সেখানে অবস্থান করেছে এবং গ্রেফতার ৪ জঙ্গির সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছে। তারা রংপুর বিভাগের কোন একটি ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যানকে হত্যারও পরিকল্পনা করেছিল।
এক প্রশ্নে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, একে-২২ রাইফেলটি অত্যাধুনিক এবং বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও সেটা ব্যবহার করেন না।
তিনি বলেন, জব্দ করা অস্ত্রগুলো পলাতক পুরাতন জেএমবির শীর্ষ ৫ নেতা গ্রেফতার হওয়া ৪ জনের কাছে রেখেছিল।
একটি এলাকায় এতদিন ধরে জঙ্গিরা কিভাবে ঘাঁটি বানিয়ে অবস্থান করছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলাকাটি খুবই দুর্গম। আর জঙ্গিরা কোন মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতো না। স্থানীয় তিন জঙ্গি ফারুক ওরফে সাজু, আকরামুজ্জামান ওরফে মুকুল ও আব্দুল হাকিম ওরফে মিলন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় অপরাপর জঙ্গিরা ওই এলাকায় ঘাঁটি বানানোর সুযোগ পেয়েছে।
কোন জেলার কোন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে হত্যার টার্গেট করা হয়েছিল জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, এটি তদন্তাধীন বিষয়, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা এটা বলতে পারি জঙ্গিদের গ্রেফতারের মাধ্যমে তাদের সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছে।