Current Date:Oct 7, 2024

সৈকতে বর্ষার রূপ দেখছেন পর্যটকেরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কয়েক দিন ধরেই উত্তাল কক্সবাজার। ভারী বর্ষণ হচ্ছে। সৈকতের বালুচরে দাঁড়িয়ে ভিজতে ভিজতে দূরের পানে তাকালে মনে হয় আকাশ আর সমুদ্র যেন একাকার হয়ে গেছে।

বর্ষার এই রূপ উপভোগ করতে অনেকে ঈদের ছুটিতে হাজির হয়েছেন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে। আজ শনিবার ঈদের প্রথম দিন সৈকতে সমবেত হয়েছেন হাজারো পর্যটক। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে এই সংখ্যাটা বাড়বে বলে জানান হোটেল ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহমদ বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে পরবর্তী সাত দিনে সৈকত ভ্রমণে আসবেন দুই লাখের বেশি পর্যটক। তিনি বলেন, এবার ঈদের ছুটি খুব দীর্ঘ নয়। এর পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার পর্যটকের আগমন অনেক কমে গেছে।

হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, গত বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিসহ সাত দিনে কক্সবাজারে আসেন অন্তত ছয় লাখ পর্যটক। তখন হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁসহ পর্যটন-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা হয়েছিল প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

ঈদের দিন দুপুরে সৈকতের লাবণি পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শ পর্যটক উত্তাল সমুদ্রে নেমে গোসল করছেন। লাইফগার্ড কর্মীরা তাঁদের উপকূলের কাছাকাছি থাকতে অনুরোধ জানাচ্ছেন, হুইসিল বাজাচ্ছেন। কিন্তু কার কথা কে শোনে! সমুদ্রের গর্জন সবকিছু বিলীন করে দিচ্ছে।

ঢাকার মালিবাগ থেকে আসা কলেজছাত্র মুশফিকুল আলম বলেন, ‘ঈদের আগের রাতেরও প্রবল বর্ষণ হয়েছে। হোটেল থেকে বের হতে পারিনি। ঈদের দিনের সকালটা অন্য রকম। আকাশ পরিষ্কার। তবে সমুদ্রের গর্জন আগের মতোই আছে। আজ সাগরে নামব।’ সিরাজগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, ‘বর্ষায় সমুদ্র উত্তাল থাকে। বিশেষ করে সমুদ্রের গর্জন অন্য রকম আনন্দ দেয়। বৃষ্টির সময় সৈকতে অন্য রকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়। ঈদের দিন সৈকতের নেমে এই উত্তাল রূপ দেখলাম। আরও দুই দিন এই সৈকতে কাটিয়েই বাড়ি ফিরতে চাই।’

সৈকতের লাইফগার্ড কর্মী আলমগীর বলেন, সকাল থেকে শত শত পর্যটক সাগরে নেমেছেন। কিন্তু তখন ভাটা থাকায় ‘লাল নিশানা’ উড়িয়ে কিংবা বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়। কেউ নিষেধ মানছে না। উত্তাল সমুদ্র দেখেই সবাই ঝাঁপ দেন।

পর্যটকেরা সমুদ্রে দৌড়ঝাঁপ ছাড়াও ছুটছেন মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, পাহাড়ি ঝরনার হিমছড়ি, পাথুরে সৈকত ইনানী, টেকনাফের মাথিনকুপ, নাফ নদীর জালিয়ারদিয়া এবং চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। কেউ কেউ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়শিবির গিয়ে তাঁদের অবস্থা দেখে আসছেন।

রাতের বেলায় পর্যটকেরা কেনাকাটার জন্য যাচ্ছেন শহরের বার্মিজ মার্কেট, শুঁটকিপল্লি ও সৈকতের শামুক-ঝিনুক মার্কেটে। তবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় এই ছুটিতে প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন, সোনাদিয়া দ্বীপ, মহেশখালী ভ্রমণ আপাতত বন্ধ। কারণ দুর্যোগের এই সময়ে সব ধরনের নৌযানের চলাচল নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন।

হোটেল মালিকেরা জানান, পর্যটকের জন্য কক্সবাজারে হোটেল, কটেজ, গেস্টহাউস ও বাংলো রয়েছে প্রায় ৫০০। ইতিমধ্যে ২৩ শতাংশ হোটেল কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। হোটেলগুলোতে দৈনিক এক লাখের মতো পর্যটক থাকার ব্যবস্থা আছে।

পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটকের আগমন অনেক কমে গেছে। আর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া তো আছেই।

পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, সৈকত ছাড়াও কক্সবাজার শহর থেকে উখিয়া পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক, ইনানী সৈকত, হিমছড়ি ঝরনা, দরিয়ানগর, রামুর বৌদ্ধপল্লিসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটকের নিরাপত্তা দিচ্ছে টুরিস্ট পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

Share