ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন জানিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে চলছে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। দেশে মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে বেআইনী হত্যার জন্য তো গোটা সরকারই দায়ী। সরকারের আশকারাতেই কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে চলছে দেশব্যাপী মানুষ হত্যার বিভিষীকা।
আজ রোববার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত কারাগার যা এখন ভাঙ্গাচোরা স্থাপনা, সেখানে বন্দী করে রাখা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে প্রচন্ড অসুস্থ। দুইশত বছরের পুরনো একটি ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বেগম জিয়া আটক রয়েছেন, ফলে নানা রোগ তাকে আক্রান্ত করছে।
তিনি বলেন, ভোটারশূন্য একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতেই বেগম জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে- অন্য কোনো কারণে নয়। জনগণ কেবল একটি ৫ই জানুয়ারিমার্কা নির্বাচনী তামাশা দেখার অপেক্ষা করছে। কারাভবনের দেয়াল ও ছাদ থেকে অবিরামভাবে ঝরে পড়া সিমেন্ট, বালির ধূলোয় আক্রান্ত হয়ে দেশনেত্রী কাশি ও জ¦রে ভুগছেন এবং এতে করে কিছু দিন আগে অস্ত্রোপচার হওয়া চোখগুলো ধুলোবালিতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। চোখ সারাক্ষণ লাল হয়ে থাকছে। হাত ও পায়ের প্রচন্ড ব্যথায় তার হাঁটাচলাতেও কষ্ট হচ্ছে। কারাগারে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে প্রায়ই বিদ্যুৎ থাকে না। তাকে যে খাবার দেয়া হয় তাও অত্যন্ত নিম্নমানের।
রিজভী বলেন, আসন্ন আন্দোলন সম্পর্কে কম্পমান হয়েই মানুষ হত্যায় লিপ্ত হয়েছে সরকার, শুধু সংগ্রামী জনগণকে ভীত করা। মাদকবিরোধী যুদ্ধের আড়ালে চলছে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। মাদকবিরোধী অভিযানে ব্যাপক হত্যাকান্ড ঈদোত্তর আন্দোলন দমনে একটি টেষ্ট কেস। তবে জনগণ এই নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন দেশপ্রেম, অপরিসীম সাহস, সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মানসিকতা ও শিসাঢালা প্রত্যয় নিয়ে নেতাকর্মীরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য মাঠে নামবে।
তিনি বলেন, জাল নথির ওপর ভিত্তি করে সাজানো মিথ্যা মামলায় সরকারের নির্দেশে নিম্ন আদালত কর্তৃক সাজা দিয়ে দেশনেত্রীকে কারাগারে বন্দী করা হয়েছে, সরকারি বহু টালবাহানার পর সে মামলায় বেগম খালেদা জিয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও সরকারি কারসাজিতে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আটকে দেয়া হয়েছে। হাইকোর্ট কোনো মামলায় জামিন দেওয়ার পর আপিল বিভাগ কারো জামিন স্থগিত করে এমন নজির বাংলাদেশে আর একটিও নেই। মামলাগুলো নিম্ন আদালতেই জামিনযোগ্য, অথচ এতে প্রমাণিত হয় সরকার সকল স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে নিজের কব্জায় রেখেছে। আদালতের শরীর থেকে ন্যায়বিচারের আত্মা উধাও করে এটিকে একটি শূন্য কাঠামোতে পরিণত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সরকার।
রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা। বিএনপির পক্ষ থেকেও বারবার তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং তাকে তার পছন্দ অনুযায়ী উন্নত হাসপাতালে চিকিৎসার জোর দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকার দেশ-বিদেশের সোচ্চার দাবিকে উপেক্ষা করছে বেপরোয়া স্বৈরশাসকের নির্দয় ভঙ্গিতে। জামিন আটকে রেখে দেশনেত্রীর মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধু একজনের প্রতিহিংসার প্রতিফলন। আমি আবারো দাবি জানাই- জামিন নিয়ে কানামাছি খেলবেন না। অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের পূর্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় বাংলাদেশের জনগণ বেগম খালেদা জিয়ার ওপর যে জুলুম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হচ্ছে তার জবাব দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে।
মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যা সম্পর্কে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা আরো বলেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য মানবাধিকারকে ঠাট্টা করা। খুনী-সন্ত্রাসীদের ন্যায় বেআইনী হত্যাকে স্বীকৃতি দেয়া। কাউন্সিলর একরাম হত্যার অডিও শুনে, তার স্ত্রী ও মেয়েদের কান্না শুনে শুধু বাংলাদেশের মানুষের বিবেকই নয়, বিশ্ববিবেককেও নাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু একরাম হত্যাই নয় এখন পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানের নামে প্রায় ১৩০ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। গত ৪ মাসে ২৫০ জন মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যাদের বেশিরভাগই আবার তরুণ যুবক। তারা কে কতটুকু অপরাধের সাথে জড়িত সে সম্পর্কে জনগণকে অন্ধকারে রেখে বিনাবিচারে হত্যার পেছনে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। নিহত পরিবারগুলো শোকের সাগরে ভাসছে। মানুষের দুঃখ কষ্টকে নিয়ে যারা এমন মন্তব্য তারাই করতে পারে যারা অবৈধ ক্ষমতায় মশগুল থেকে মানবিক গুণাবলী হারিয়ে ফেলে।
রিজভী ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে বলেন, ড্রাগ চেইনের লিংক হিসেবে চুরি চোট্টামি করা ছিঁচকে কিছু মানুষসহ প্রমাণহীন আরো অজ্ঞাত অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযান চালানো হলেও চেইনের শীর্ষে বসে থাকা অমিত ক্ষমতাধর গডফাদাররা বসে আছে কী করে? প্রশ্ন হচ্ছে সরবরাহের উৎস পথ আঁটকে যাচ্ছে না কেনো? তাহলে কারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মাদক ঢুকতে সহায়তা করছে? রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কী উৎসমুখ খোলা থাকে? কারণ এই উৎসমুখগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন বদিদের মতো এমপিরা- প্রশাসনের সহায়তায়। বদিসহ ক্ষমতাসীনদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কিভাবে এতগুলো গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশ ছেড়ে গেল জাতি তা জানতে চায়। সরকারই গডফাদারদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করছে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী সরকার বাংলাদেশে ‘একটি এতিম জেনারেশন তৈরী করতে চায়।’ বেআইনী হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে সরকার তাদের টিকে থাকার সমাধান খোঁজে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে অন্যায়ের প্রতিশোধ প্রকৃতি নিজেই নেয়। একটি বেআইনী হত্যা আরও অনেক হত্যার বিস্তৃতি ঘটায়।
রিজভী বলেন, মাদকের বিস্তার ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের সহায়তাকারী হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য। তাদের এ সাড়ে নয় বছরে মাদকে ছেয়ে গেছে দেশ। প্রতিবেশী দেশ যথা ভারত থেকে ফেনসিডিল ও মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আমদানিকে মদদ দিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। কথায় আছে কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে দুটি জিনিস ধ্বংস করতে হয়- এক হলো শিক্ষা, দুই হলো যুবসমাজ। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার এ দুটিই কাজই করতে পেরেছে দক্ষতার সাথে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে তারা পুরোপুরি ধ্বংস করে এখন মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করছে। এখন কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে এডহক ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে আরেক দফা উস্কে দিচ্ছেন ওবায়দুল কাদের সাহেবরা। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন একরাম হত্যা তদন্ত করবে একজন ম্যাজিস্ট্রেট। এসব মনভোলানো কথায় জনগণের আতঙ্ক দূর হবে না। এ ধরণের বক্তব্যও একটা তামাশা।
এছাড়া ঢাকায় আয়োজিত একটি ইফতার মাহফিলে আসার সময় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর বিএনপির সভাপতি ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় এস এম হলের সাবেক জিএস ছাত্রনেতা খন্দকার তারিকুল ইসলাম আরিফকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন রিজভী।