নিজস্ব প্রতিবেদক: বাঙালি জাতির মুক্তির জন্যই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাঙালি যা কিছু অর্জন করেছে তা আওয়ামী লীগের সময়ই করেছে।
শনিবার (২৩ জুন) সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, পরিবার হারিয়ে আওয়ামী লীগই এখন আমার পরিবার হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নানা অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদচারণা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। তিনি ঝুঁকি নিয়ে আমাদের স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছেন। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আজকে সেই ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ শেষে জাতির পিতার অনুরোধে মিত্রবাহিনী ফেরত নিয়েছিল ভারত। যা পৃথিবীর আর কোন দেশে এমন মিত্রবাহিনী ফেরত নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদেশে রাজনীতিটা হয়ে গিয়েছিল শো-অফ করার জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা একদম প্রান্তিক মানুষ পর্যন্ত চলে গিয়েছি। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি।’
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতি করি, এটা নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্য না। আমরা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করি। মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, সে চিন্তা করাটাই একজন রাজনীতিকের জীবনের বড় সম্পদ। রাজনীতি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, দেশ গড়ার জন্য।’
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে যারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল, যারা ক্ষমতার আশেপাশে ছিল শুধু তাদেরই ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে মানুষ খুন করেছে। দুর্নীতি করেছে। অত্যাচার করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ মানুষের ঘরে ঘরে উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা মানুষের জন্য কাজ করেছি। যার কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জানতেন- ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করবে এবং পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না, এ কারণে অনেক প্রস্তুতি প্রয়োজন। সে কারণে তিনি লন্ডনে বসে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু সেসব বিষয় তখন মুখে বলেননি। তিনি অসহযোগ আন্দোলন ডাক দিয়ে স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি গেরিলা যুদ্ধের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করি এবং বিশ্বজনমতের কারণে স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি বাহিনী।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে ফিরে এসেই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব তুলে নেন বঙ্গবন্ধু। পৃথিবীর ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিশ্বের কোনও দেশ থেকে কোনও মিত্রবাহিনী ফেরত যায়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় বাহিনীকে ফেরত নেন। এটাও হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারণে।’
বিশেষ এ সভায় সভাপতিত্ব করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
সভায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, জেলা, উপজেলা, মহানগর, পৌরসভার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ চার সহস্রাধিক প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা শুরু হয়।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বর্ধিত সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সভায় দলের নেতাকর্মীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এতে সারাদেশ থেকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের সাড়ে চার হাজার নেতাকর্মী যোগ দিয়েছেন।