নিজস্ব প্রতিবেদক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি এবং জামায়াতের নেতারা হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছেন। বিএনপির সঙ্গে জোটে থেকে রাজনৈতিকভাবে আর কোনো লাভ দেখছে না জামায়াত। ফলে নির্বাচনে ভালো ফলের জন্য দলটি এখন নতুন বন্ধুর সন্ধান করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের দাবি, আড়ালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনী জোট গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত।
তবে জাপার সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনের বিষয়টি এখনো আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে আভাস মিলেছে। জাপার শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাঁর কাছে জামায়াতের মধ্যম পর্যায়ের কিছু নেতা গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের ‘অথরিটি’ নিয়ে সংশয় থাকায় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জামায়াতকে নিতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনুমতি লাগবে। লাগবে প্রভাবশালী একটি দেশের সবুজ সংকেতও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহম্মদ কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের আগে জামায়াত কোন দিকে যাবে, তা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে দলটি স্বস্তিতে নেই, এটুকু বোঝা যায়। ফলে সুবিধাজনক একটি জোট বা দলের সঙ্গে তারা যাবে- এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার অবশ্য মনে করেন, দেশ এখন যারা নিয়ন্ত্রণ করে, ক্ষমতার এমন কেন্দ্র এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা পেলে জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠন সম্ভব। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির কোনো স্তরের সঙ্গে এসংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই।’
জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’ তাঁর মতে, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এ ধরনের নানা গুঞ্জন তৈরি হয়। হতে পারে জামায়াত-জাতীয় পার্টি সম্পর্কে সে রকম কোনো গুঞ্জন।
বিএনপি ও জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দল দুটির মধ্যে দূরত্ব এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সর্বশেষ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির কয়েক দফা অনুরোধ সত্ত্বেও জামায়াত তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার না করায় দলটির অবস্থান নিয়ে বিএনপিতে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়েছে।
দলটি মনে করছে, ওই ঘটনার নেপথ্যে কোনো তত্পরতা থাকতে পারে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদের কারামুক্তির ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধায় বেশ কয়েক বছর মাঠে নামতে না পারলেও হঠাৎ করে গত ১৩ জুলাই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সারা দেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালনের ঘটনাকেও সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি।
অন্যদিকে জামায়াত মনে করছে, নির্বাচন সামনে থাকায় কৌশলগত কারণেই বিএনপি এখন ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। দেশটির সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ঘন ঘন যোগাযোগের বিষয়টিও নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখছেন দলটির নেতারা। জামায়াত নেতারা মনে করেন, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের অর্থ হলো, জামায়াতের সেখানে জায়গা নেই। ফলে ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিত দলটির নেতারা আস্তে আস্তে বিএনপির কাছ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন বলে কারো কারো ধারণা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, জামায়াত এখনো ২০ দলীয় জোটে আছে। তাঁরা বলেন, সরকার নানা প্রলোভন দিয়ে বিএনপির পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটকেও ভাঙতে চাইছে। তবে তাঁরা আশা করছেন, সরকার এতে সফল হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে দুই নেতা বলেন, নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে মেরুকরণ ঘটে থাকে। বিএনপির বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এতে ২০ দলীয় জোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। সূত্র: কালের কণ্ঠ