নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমলেও দেশের বাজারে দাম বাড়িয়েছে পরিশোধনকারী দুই প্রতিষ্ঠান সিটি ও মেঘনা গ্রুপ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে পণ্যটির দাম। রাজধানীর খুচরা বাজারেও চিনির দাম কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বেড়েছে।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে চিনি পরিবেশক মেসার্স এসএম ট্রেডার্সের দেলোয়ার হোসেন জানান, ৭ থেকে ১০ দিন আগেও মিলগেটে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৪৯-৫০ টাকা। বর্তমানে তা ৫১-৫২ টাকায় বিক্রি করছে পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। রমজান মাস সামনে রেখে একশ্রেণীর মৌসুমি ব্যবসায়ী চিনির মজুদ গড়ে তুলতে তত্পর হয়েছে। এছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যটির চাহিদাও আগের চেয়ে বেড়েছে। এ কারণে বাজারে চিনির দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো।
রাজধানীতে গতকাল পরিবেশক পর্যায়ে প্রতি মণ (৩৭ কেজি ৩২০ গ্রাম) চিনি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৯১৫ থেকে ১ হাজার ৯২০ টাকায়। ১০ দিন আগে যা বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৮২০ থেকে ১ হাজার ৮২৫ টাকায়। দাম আরো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৮ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৫২-৫৬ টাকায়। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও মৌলভীবাজারে খুচরা পর্যায়ে গতকাল প্রতি কেজি চিনি ৫৫-৫৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মৌলভীবাজারে চিনির পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স আবির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন জানান, গত ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারি তারা ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চিনি বিক্রি করেন ২ হাজার ৪৪৫ থেকে ২ হাজার ৪৬০ টাকায়। একই চিনি গতকাল বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৬২০ থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকায়। অর্থাৎ এ সময়ের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে ১৭৫ থেকে ১৯০ টাকা।
চিনির দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের মালিকানাধীন ইউনাইটেড সুগার মিলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, বাজারে যে চিনি ৫২ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে, তা পরিশোধনের পর কেজিপ্রতি খরচ দাঁড়িয়েছে ৫৫-৫৬ টাকা। অনেক দিন ধরে তারা লোকসান দিয়ে চিনি বিক্রি করছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, সরকারি মিলের প্রতি কেজি চিনি ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সে হিসাবে এখনো তারা অনেক কম দরে চিনি বিক্রি করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
চিনির দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে গতকাল সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ও মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিত সাহার মুঠোফোনে কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বৈশ্বিক ডাটা পোর্টাল ইনডেক্স মুন্ডি ডটকম সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত চিনির দাম ওঠানামা করেনি। নভেম্বরে সামান্য বাড়লেও ডিসেম্বরে চিনির দাম আবারো আগের অবস্থানে ফিরে যায়। এরপর জানুয়ারিতে দাম আবার কমে। গত জুলাই-অক্টোবর সময়কালে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৩২ সেন্ট দরে। নভেম্বরে ৩৩ সেন্ট দরে বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে আবার ৩২ সেন্টে নেমে আসে। এরপর জানুয়ারিতে আরেক দফা দাম কমে প্রতি কেজি চিনি ৩১ সেন্টে বিক্রি হয়।
চিনির দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সুদহার, মুদ্রাবাজার, সরবরাহ সংকটসহ নানা বিষয়ের উল্লেখ করেন বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজি আবুল হাসেম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, গত কয়েক দিন আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম স্থিতিশীল থাকলেও গতকাল সামান্য বেড়েছে। তবে বর্তমানে সমস্যা হচ্ছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ব্যাংকঋণের সুদহার ১৪ শতাংশ করা হয়েছে। টাকার বিপরীতে ডলারের মানে ঊর্ধ্বগতি চলছে। এছাড়া ঈগলু সুগার মিল থেকে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে, দেশবন্ধু ও এস আলম সুগার মিল থেকেও উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী সরবরাহ কমছে। এ কারণে চিনির বাজার ঊর্ধ্বমুখী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে সারা বছর চিনির চাহিদা রয়েছে ১৫-১৬ লাখ টন। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশীয় চিনিকল চাহিদার তুলনায় সামান্য উৎপাদন করছে। চিনির বাজার মূলত নিয়ন্ত্রণ করছে সিটি-মেঘনা গ্রুপ। দেশবন্ধু, এস আলম ও ঈগলু চিনি উৎপাদন করলেও তা পরিমাণে তেমন বেশি নয়।