Current Date:Oct 12, 2024

মেয়ের গায়ের রং কালো, তাই নির্যাতন পরে তালাকনামা!

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ‘আমার মেয়ের গায়ের রং কালো। আল্লাহই তারে কালো বানাইছে। ছয় বছর আগে দেখে শুনে বিয়ে দিয়েছিলাম। মেয়ে কালো বলে তাদের চাহিদা মতো এক লাখ টাকার বেশি যৌতুকও দিয়েছিলাম। ছয় বছর পর এক ছেলেসহ আমার সেই মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। পরে তালাকনামাও পাঠিয়ে দিয়েছে।’

এসব কথা বলছিলেন যশোরের শার্শা উপজেলার বাসিন্দা ওবায়দুর রহমান। তিনি একজন গরু ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ তাঁর মেয়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের হাতে নির্যাতনের শিকার। এ ব্যাপারে যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুন্যালে মামলা করেছেন ওবায়দুর রহমান। আজ মঙ্গলবার তিনি এ প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানান।

সাবিনার শ্বশুরবাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায়। জানা যায়, ওবায়দুর রহমানের মেয়ের বিয়ে হয় ছয় বছর আগে। সাবিনার স্বামীর নাম আলমগীর। তবে গায়ের রং কালো থাকায় শাশুড়ি শুরু থেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না। পরে শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বিয়ের সময় যৌতুকও দিয়েছেন ওবায়দুর রহমান। তারপরও নানাসময় ওবায়দুরের কাছ থেকে টাকা নেন আলমগীর।

ওবায়দুরের মেয়ে বলেন, ‘আমি কালো বলে, আমাকে সন্তান নিতেও বাধা দিত স্বামী ও শাশুড়ি। পেটে লাথি মেরে গর্ভের একটি সন্তান নষ্টও করে দেয় আলমগীর।’

তারপরও ওই মেয়ে একটি সন্তানের জন্ম দেন। তিনি বলেন, ‘আমি কালো, দেখতে ভালো না, এই অজুহাতে তাঁরা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।’

ওবায়দুরের মেয়ে বলেন, ‘আমি কালো। তাই শাশুড়ি আমাকে অপছন্দ করে। এ নিয়ে অনেক কথা শুনেও চুপ থাকতাম। শেষ পর্যন্ত আর টিকতে পারলাম না। নির্যাতন করে আমাকে বাড়ি থেকে নামিয়ে দিল স্বামী আলমগীর ও শাশুড়ি জরিনা বেগম। আমি বাবার বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার রুদ্রপুর গ্রামে চলে এসেছি।’

যশোরের কায়বা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মেয়েটির গায়ের রং কালো বলে, তাঁরা (শ্বশুরবাড়ির লোকজন) তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছে। একই বিষয় নিয়ে আগেও দুই একটি সালিশ বিচার হয়েছে। সালিশে বসে তাঁরা সব কিছু মেনেও নিয়েছেন। তারপরও মেয়েটির ওপর নির্যাতন থামেনি। শেষ পর্যন্ত তাঁকে কালো বলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল। এমন কী তালাকনামাও পাঠাল তাঁরা।’

এ ব্যাপারে ওই নারীর স্বামী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার বউ আমাকে মারধর করে। আমার মাকে মারে। আমার মা ও স্কুলপড়ুয়া ভাই আরিফকে খেতে দেয় না। আমাকে বলে, বাসা ভাড়া করে অন্য জায়গায় থাকতে হবে। এসব নিয়েই বিরোধ। সে কালো বলে তার প্রতি আমাদের কোনো অবহেলা নেই।’

আলমগীর বলেন, ‘তালাক দিয়ে একটু শাসন করতে চেয়েছি। পরে আমার এলাকার মেম্বর সালামকে দিয়ে কথা বলিয়েছি রুদ্রপুরের মেম্বর হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। মিলতাল করে নেওয়া হবে। কারণ ছেলেটা তো আমার।’

 

Share