খালেদার জীবন নিয়ে শঙ্কিত রিজভী

0
77

দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দাবি, বন্দী খালেদা জিয়ার কোনো চিকিৎসাই হচ্ছে না। তার চিকিৎসার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম যা বলেছেন, তা ‘ডাহা মিথ্যা’।

বুধবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকার যে ধরনের আচরণ করেছে এবং তার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা নিয়ে যে টালবাহানা করছে তাতে আমরা দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করছি।’

‘বেগম খালেদা জিয়া হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও তাঁর জামিন স্থগিত করাও ওই চক্রান্তেরই অংশ।’

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন-বেগম খালেদা জিয়াকে যথাযথ মর্যাদায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ডাহা মিথ্যাচার।

রিজভীর দাবি, তাদের দলের নেত্রীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়াকে অর্থোপেডিক বেড দেয়াসহ যেসব চিকিৎসার সুপারিশ করেছিল তা এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার কোন চিকিৎসাই হচ্ছে না। বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দ্বারা যেসব চিকিৎসা সেবা পেতেন সে সুযোগ থেকেও তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। মনে হচ্ছে এর পেছনে সরকারি কোনো গভীর চক্রান্ত রয়েছে।’

‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের নির্দয় স্বৈরশাসকরা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি নির্মম আচরণের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বর্তমান বাংলাদেশের স্বৈরশাসকও দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে নির্দয় আচরণ করে তাঁকে এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলতে মারাত্মক চক্রান্তজাল বুনছে।’

গত ২৮ মার্চ খালেদা জিয়াকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজির না করার পর থেকেই তার অসুস্থতার বিষয়টি সামনে আসে।

সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে।

গত ৩০ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের নেত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার দাবি করেন। কিন্তু এর অন্য রাজনৈতিক অর্থ তৈরি হচ্ছিল দেশে। পরে এই অবস্থান থেকে সরে এখন বিএনপি খালেদা জিয়াকে দেশেই বেসরকারি হাসপাতাল ইউনাইটেডে ভর্তির দাবি তুলছে।

গত ১৬ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির এই দাবি আইন অনুযায়ী মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, খালেদার চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালের বাইরে হওয়া সম্ভব নয়।

নাসিম বলেন, ‘যেহেতু তিনি (খালেদা জিয়া) রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণেই কারাগারে আছেন, তাই যতদূর সম্ভব আমাদের দায়িত্ব তাকে নিয়মিত চিকিৎসা করা এবং সুস্থ রাখা।’
বিএনপি প্রধানের চিকিৎসায় সব কিছুই করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের আমলে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কারাবন্দি অবস্থায় চিকিৎসা পাবে না এটা সমর্থনযোগ্য নয়। এ কথাটি বলা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এসব বক্তব্য মানতে নারাজ রিজভী আবার খালেদা জিয়াকে  তার পছন্দানুযায়ী রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার  দাবি জানান।

প্রধানমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে

রিজভীর দাবি যুক্তরাজ্য সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ব্রিটেনের টেলিভিশন চ্যানেল-ফোর বিরোধী দল ও মতের ব্যক্তিদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেও একদিন প্রধানমন্ত্রীকে এর জবাব দিতেই হবে। বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম, খুন, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন চালিয়ে সরকার পতন ঠেকানো যাবে না।’

কোটা আন্দোলনের তিন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ বেআইনি

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আনেআদলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন নেতাকে নোটিশ না দিয়ে মাইক্রোবাসে করে তুলে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেয়া বেআইনি বলে দাবি করেন রিজভী।

এই তিনজনের মধ্যে নুরুল ইসলাম নুর সোমবার জানিয়েছিলেন, গুলিস্তান এলাকায় নেয়ার পর তাদের চোঁখ বাঁধা হয়েছিল গামছা দিয়ে। তবে পরদিন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইনডিপেনডেন্টে গিয়ে আরেক নেতা ফারুক হাসান জানান, তাদের চোখ বাঁধা হয়নি। এটা ছিল ভুল বুঝাবুঝি।

রিজভী বলেন, এই তিন জনকে এভাবে তুলে নেয়া সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী ও বিদ্যমান আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

‘সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে শুধু অগ্রাহ্যই করছে না, বরং ঠান্ডা মাথায় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইন বহির্ভূতভাবে গ্রেপ্তার, পুনঃগ্রেপ্তার, গ্রেপ্তার না দেখিয়ে আটক করে রাখাসহ অবিরাম নিষ্ঠুর পৈশাচিক নিপীড়ণ-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।’

রিজভী বলেন, “আন্দোলনের মুখে ‘রাগান্বিত’ ও ‘ক্ষুদ্ধ’ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চাকরিতে সম্পূর্ণ কোটা প্রত্যাহার করে নেওয়া এক ভয়ঙ্কর দূরভিসন্ধির অংশ। এখন এই দূরভিসন্ধির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর সরকারের বিপজ্জনক আক্রমণের ছোবলের মধ্য দিয়ে।’