Current Date:Oct 12, 2024

মোর নামটা লেখো বাহে, তোমার লেখায় যদি মোর কিছু হয়

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : ‘বাধত আছোং বাহে, চোখের সামনে বাড়ির চালাটা পানিত গেউল। এ্যালা মোর খোঁজ কায়ো করে না বাহে, মোর নামটা লেখো বাহে, তোমার লেখায় যদি মোর কিছু হয়।’ খাওয়ার জন্য বুনো কচুর ডাটা কাটতে কাটতে এভাবেই আঞ্চলিক ভাষায় আর্তনাত করছিলেন ধরলার ভাঙনে সর্বশান্ত হওয়া কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরবড়লাই গ্রামের মৃত নবিউল্লাহর স্ত্রী মরিচ মতি (৭৪)।

শুধু মরিচ মতি নন, গত এক সপ্তাহেই ভাঙনের কারণে বাড়ি-ভিটা ছাড়তে হয়েছে শতাধিক পরিবারকে। বারবার নদী ভাঙনে নি:স্ব পরিবারগুলো এখন আশ্রয় হারিয়ে অন্যের ভিটায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। নিজ এলাকায় কাজকর্ম না থাকায় দুবেলা খাবার জোটাতেও পারছেন না তারা।

সর্বগ্রাসী ধরলার ভাঙন গ্রাস করেছে আবাদি জমি, গাছপালা, বাঁশঝাড়সহ বন্যা নিয়ন্ত্রণের বাঁধ। ভিটেমাটি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সরকারি রাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় অন্যের ভিটায় আশ্রয় নিয়েছেন ভাঙন কবলিতরা।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ধরলা ও তিস্তা ব্রিজ থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার ব্যাপী জায়গায় প্রতিবছর ভাঙনে নি:স্ব হচ্ছে শতশত পরিবার। সে কারণে জেলায় ৭টি পয়েন্ট চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৪২ কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তা এখন ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে। ফলে ভাঙনে দিশেহারা পরিবারগুলো পাচ্ছে না মাথা গোঁজার ঠাঁই। গত কয়েকদিনে দক্ষিণে সোনাইকাজী, চর বড়লাই, আরডিআরএস বাজার এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার ভয়াবহ ভাঙনের শিকার হয়েছে। ধরলার পানি কমার সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভাঙনের তীব্রতা।

নদী ভাঙনে সব হারানো নজরুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম জানান, অন্যান্য বারের চেয়ে এবার বেশি ভাঙন দেখা যাচ্ছে। কয়েক দিনে বেশ কিছু বসতভিটা নদীগর্ভে যাওয়ায় অনেকেই বাড়ি সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে গেছেন।

বড়ভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানান, ভাঙনের কারণে কিছু পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরকে চাল-ডাল দেওয়া হয়েছে । সরকারি বরাদ্দ আসলে তাদের পুর্ণবাসন করা হবে ।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবেন্দ্রনাথ উরাঁও জানান, চরবড়লাই ও সোনাইকাজী এলাকার ভাঙন উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগ ছাড়া স্থানীয়ভাবে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। আর যারা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন প্রকৃতপক্ষে তাদের জমি থাকলে ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে ।

Share