আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে গাড়ি ও ট্রাক আমদানি নিয়ে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ তদন্তের ধারাবাহিকতায় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের পর এবার গাড়ি আমদানিতেও শুল্ক আরোপ করতে পারে দেশটি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো শীর্ষ গাড়ি রফতানিকারক দেশগুলো জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। খবর রয়টার্স, বিবিসি ও এএফপি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্প ‘দেশ হিসেবে আমাদের শক্তিশালী হওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ এ অবস্থায় তিনি গাড়ি আমদানির সামগ্রিক বিষয় তদন্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট নীতির সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপ এটি।
১৯৬২ সালে প্রণীত ট্রেড এক্সপানশন অ্যাক্টের ২৩২ নং ধারা অনুযায়ী তদন্তটি পরিচালনা করা হবে। এ আইনে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে, তা প্রমাণিত হলে প্রেসিডেন্ট আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপের ক্ষমতা রাখেন। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমদানিকৃত গাড়ি ও এর যন্ত্রাংশের কারণে দেশের গাড়ি শিল্পের পাশাপাশি এ খাতে নতুন আধুনিক প্রযুক্তির গবেষণা উন্নয়ন কার্যক্রমে হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে কিনা, তা এ তদন্তে খতিয়ে দেখা হবে।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস এক বিবৃতিতে এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের কাছে যেসব প্রমাণ রয়েছে, তাতে দেখা গেছে অন্য দেশ থেকে আমদানির কারণে দশকের পর দশক ধরে স্থানীয় গাড়ি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো যদি গাড়ি আমদানিতেও যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করে, তাহলে টয়োটা মোটর করপোরেশন, নিশান, হোন্ডা ও হুন্দাইয়ের মতো গাড়ি কোম্পানিগুলো বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এশিয়ার এসব গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর বেশ নির্ভরশীল। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের এ তদন্তের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার এশিয়ার গাড়ি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে পতন দেখা যায়। জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে দেখা চীন জানিয়েছে, প্রয়োজনে স্বার্থ রক্ষায় তারাও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গাও ফেং বৃহস্পতিবার এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, চীন জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের বিপক্ষে। এ ধরনের কিছু ঘটলে বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্বাভাবিক বাণিজ্য ক্রয়াদেশ ব্যাহত হয়। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তের বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং এর প্রভাব যাচাই করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ তদন্তের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে জাপান। জাপানের বাণিজ্যমন্ত্রী হিরুশিগে সেকু সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে বলেন, যদি এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তাহলে এটি হবে ব্যাপক হারে বাণিজ্য সীমাবদ্ধতা আরোপ। এ ধরনের পদক্ষেপ গোটা বাজার ব্যবস্থাকেই দ্বিধায় ফেলে দেবে। এছাড়া এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতিবিরুদ্ধ হবে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি জাপান যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানির ওপর খুবই নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র দেশটির নির্মিত গাড়ির অন্যতম বাজার। যুক্তরাষ্ট্রে সার্বিক রফতানির মধ্যে শুধু যাত্রীবাহী গাড়ির অবদান ৩০ শতাংশ।
এদিকে গাড়ি আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করলে আন্তর্জাতিক গাড়ি ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ কোম্পানিগুলোর রফতানি ব্যয় বেড়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে গাড়ি ও যন্ত্রাংশ নির্মাতা কোম্পানিগুলো উদ্বেগে রয়েছে। এশিয়ার কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরো বেশি আশঙ্কা কাজ করছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানিকৃত গাড়ির এক-তৃতীয়াংশ এশিয়া থেকেই সরবরাহ করা হয়।