Current Date:Oct 11, 2024

রাসিক নির্বাচন: লিটনের ইশতেহার ঘোষণা

রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীতে শিল্প কারখানা স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে প্রাধান্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ১৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।

এতে ৮১ টি উপধারায় রাজশাহীকে মেগাসিটি হিসেবে গড়ে তোলাসহ শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, আবাসন, অবকাঠামো, ক্রীড়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে নগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিটনের পক্ষে দলের উপদেষ্টা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল খালেক ইশতেহার পাঠ করেন। এ সময় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনী ইশতেহারের প্রথমেই খায়রুজ্জামান লিটন রেখেছেন কর্মসংস্থান। এ দফায় তিনি বলেছেন, গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে গার্মেন্টস শিল্প, চামড়া শিল্প, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা ও বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক দ্রুত বাস্তবায়ন করে লক্ষাধিক মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানা ও রাজশাহী টেক্সটাইল মিল পূর্ণাঙ্গ রুপে চালু করা, রাজশাহীর জুট মিল সংস্কার ও সম্প্রসারণ, কৃষি ভিত্তিক শিল্প স্থাপন করে কৃষিপণ্য যেমন আম, আলু, টমেটো প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পাট শিল্প স্থাপন করা হবে।

দ্বিতীয় দফায় রেখেছেন রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত বাস্তবায়ন করা, রাজশাহীতে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, একাধিক নতুন বালক ও বালিকা বিদ্যালয় এবং কলেজ স্থাপন করা। পূর্ণাঙ্গ সংগীত, আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা। রাজশাহী হোমিওপ্যাথি কলেজ ও হাসপাতালের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, বস্তিবাসী ও বিদেশে চাকরি পেতে আগ্রহীদের জন্য জনশক্তি রপ্তানিমুখি বিশেষ কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করা, সরকারি পর্যায়ে বিশ্বের প্রধান প্রধান ভাষা শিক্ষার সার্টিফিকেট কোর্স চালু করা, ফ্রি ওয়াইফাই জোন পুণরায় চালু, ল্যান্ড সার্ভে ইন্সটিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা, শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করা।

তৃতীয়দফায় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের উন্নয়ন হিসেবে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার বেডের হাসপাতাল দ্রুত চালু, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃসদন স্থাপন করা, শিশু হাসপাতালের নতুন ভবনের কাজ শেষ করে দ্রুত চালু করা, সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে প্রস্তাবিত পানি শোধনাগার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন, বস্তিবাসীর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পানি, ড্রেন, রাস্তা বিদ্যুৎসহ নাগরিক সুবিধার মান বাড়ানো।

চতুর্থ দফায় আবাসন উন্নয়নে বলা হয়েছে, নিম্ম আয়ের মানুষদের জন্য ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করে সহজ কিস্তিতে মালিকানা প্রদান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, আলেম ও সাংবাদিকদের জন্য পৃথক আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হবে।

পঞ্চম দফায় অবকাঠামোর বিষয়ে বলা হয়েছে, নগরীর চতুর্দিকে রিং রোড ও লেক নির্মাণ করা, নগরীতে প্রয়োজনীয় গণশৌচাগার, নগরীর বাসাবাড়িসহ শতভাগ গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করা, অসমাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন, যানজট নিরসনে ব্যস্ততম মোড় এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং রেলক্রসিংগুলোতে ওভারপাস নির্মাণ করা, হযরত শাহমখদুম মাজারসহ ঐতিহাসিক স্থানের উন্নয়ন করে পর্যটন বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, রাজশাহীতে পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্র চালু, দুটি মডেল মসজিদ দ্রুত নির্মাণ।

ষষ্ঠ দফায় পরিবেশ উন্নয়নে শান্তির নগরী হিসেবে খ্যাত রাজশাহীর গৌরব ফিরিয়ে আনা, বৃক্ষশোভিত রাস্তার ডিভাইডার রাখা, প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে পুকুর সংরক্ষণ, বৃক্ষ রোপন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রিসাইকেল প্লান্ট স্থাপন করা।

সপ্তম দফায় যোগাযোগ খাতে বলা হয়েছে, রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিরতিহীন ট্রেন চালু, রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালু, রাজশাহী বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রুপান্তর, পদ্মা নদীকে ড্রেজিংয়ের আওতায় আনা, ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য লাগেজভ্যান যুক্ত করা এবং মহাসড়কগুলোকে চারলেনে উন্নীত করা।

অষ্টম দফায় ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও নাগরিক কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণায় বলা হয়, টেস্ট ক্রিকেট ভেন্যু বাস্তবায়ন, বিকেএসপি বাস্তবায়ন, স্টেডিয়ামগুলোকে আন্তর্জাতিক খেলাধুলার পরিবেশ ফেরানো, মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সকে পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্সে রুপান্তর, প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে বহুমুখী নাগরিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।

নবম দফায় নারী উন্নয়নে উদ্যোক্তদের আইটি ভিক্তিক উদ্যোগ, কুটিরশিল্প ও হস্তশিল্প স্থাপন ও প্রশিক্ষণে সহায়তা করা হবে।

দশম দফায় প্রবীণ নিবাস ও নগরীর হাসপাতালসহ বেসরকারি দপ্তরে প্রবীণদের জন্য বিশেষ হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে।

এগারো দফায় প্রতিবন্ধি উন্নয়নে বলা হয়, প্রতিবন্ধি বান্ধব পরিবেশ ও অবকাঠামো নিশ্চিত করা, জাতীয় নীতি বাস্তবায়ন, পৃথক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা।

বারো দফায় মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে গণকবর চিহ্নিত করে সংরক্ষণ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে সড়ক ও মোড়ের নামকরণ, রাজশাহী কলেজের প্রথম শহীদ মিনারকে একটি কমপ্লেক্স আকারে গড়ে তোলা, নগরীর প্রবেশমুখে এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য ভিত্তিক স্মারক স্থাপন, মিউজিয়াম স্থাপন, বড়কুঠিকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করা।

তেরো নম্বর দফায় স্বনির্ভর সিটি করপোরেশন করার আশ্বাস দিয়ে বলা হয়, শতকোটি টাকা ঋণগ্রস্ত সিটি করপোরেশনকে স্ব-নির্ভর প্রতিষ্ঠান করা হবে।

চৌদ্দ দফায় ইমাম, পুরোহিত ও যাজকদের উৎসবভাতা পুনরায় চালু, শহররক্ষা বাঁধ সংস্কার, মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি ওয়ার্ড ভিত্তিক গণসচেতনা সৃষ্টি, কমিউনিটি পুলিশের কার্যক্রম গ্রহণ করা। সিটি করপোরেশন কর্তৃক সংবর্ধনা ও পদক চালু করা এবং নগর ভবনকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র রুপে প্রতিষ্ঠা করা।

পনেরো দফায় বলা হয়েছে, নগরবাসীর বাসাবাড়িতে নির্ধারণ করা বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিল করে আগের সহনীয় অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। এজন্য যা যা করা প্রয়োজন তিনি নির্বাচিত হলে তা করবেন।

ইশতেহার বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘এই নির্বাচনী ইশতেহারে নগরবাসীর সেবা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে যা যা প্রয়োজন সবই রাখা হয়েছে। আশা করি নগরবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে আরেকবার নগর উন্নয়নের সুযোগ দেবেন।’

এদিকে বিএনপি বা অন্য কোন মেয়র প্রার্থী এখনও নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেননি। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘ইশতেহারে কি থাকবে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে।’

 

Share