Current Date:Oct 12, 2024

বগুড়ায় ৪ মাস ধরে বিআরটিসি কর্মচারীদের বেতন বন্ধ

অনলাইন ডেস্ক : রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি বগুড়া বাস ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গত চার মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ থাকলেও বাস থেকে প্রতিমাসে চাঁদা তোলা হচ্ছে ১৫ লক্ষাধিক টাকা।

বিষয়টি নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বেতন-ভাতা বন্ধ থাকার বিষয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান নিজেও উদ্বেগ প্রকাশ করে বেতন-ভাতা নিয়মিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও কোনো কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগি শ্রমিক-কর্মচারীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিআরটিসি বগুড়া বাস ডিপো থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটে ৪৫টি বাস চলাচল করে। এসব বাসে আসনের চাইতে বাড়তি যাত্রী হওয়ার পরেও লোকসান দেখিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মাসের পর মাস বকেয়া রাখা হয়। অথচ চলাচলকারী বাসগুলো ডিপো থেকে বের হওয়ার আগে প্রতিদিন ম্যানেজারের নামে চাঁদা (স্থানীয় ভাষায় চুঙ্গি) বাবদ যে পরিমাণ টাকা কেটে রাখা হয় মাস শেষে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ লক্ষাধিক টাকা। এই চাঁদার টাকা ম্যানেজারসহ একাধিক সেক্টরে ভাগ বাটোয়ারা হয় বলে শ্রমিক কর্মচারীরা জানান।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, বিআরটিসি বগুড়া বাস ডিপো থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলো যাত্রী নিয়ে বের হওয়ার আগেই রুট অনুযায়ী এই চুঙ্গির টাকা টিকেট কাউন্টার থেকে কেটে রাখা হয়। এই বিষয়টি নিয়ে বিরোধিতা করার কোনো সুযোগ নেই।

নওগাঁ ও জয়পুরহাট রুটে ৫০০ টাকা, ভুরুঙ্গামারী-রাজশাহী রুটে ২০০০ টাকা, বগুড়া-বাংলাবান্ধা রুটে ২০০০ টাকা, কিশোরগঞ্জ রুটে ২০০০ টাকা, দিনাজপুর রুটে ১০০০ টাকা, বরিশাল রুটে ৩০০০ টাকা, সেতাবগঞ্জ রুটে ১৫০০ টাকা, সাতক্ষীরা রুটে ২০০০ টাকা ছাড়াও অন্যান্য রুটে চলাচলকারী বাসগুলো থেকে বিভিন্ন অংকের চুঙ্গি আদায় করা হয়। প্রতিদিন ৫০/৫৫ হাজার টাকা হিসেবে মাস শেষে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ লক্ষাধিক টাকা।

চাঁদা আদায় করা ছাড়াও প্রতিমাসে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ভুয়া বিল ভাউচার করা হয় আরও আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার। গত এক বছরে গাড়ি মেরামতের এই ভুয়া বিল ভাউচার থেকে মিলেছে এই তথ্য।

বিআরটিসি বগুড়া বাস ডিপো সূত্রে জানা গেছে, সেখানে ১৩০ জন শ্রমিক-কর্মচারীর মাসিক বেতন ভাতা বাবদ ব্যয় হয় ২৩ থেকে ২৪ লাখ টাকা। বাস ডিপোর ফোরম্যান আব্দুর রশিদ গত মাসে ম্যানেজারের বিরুদ্ধে যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ভুয়া বিল ভাউচার করার অভিযোগ এনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দেন। এরপর কর্তৃপক্ষ ম্যানেজারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আব্দুর রশিদকে বগুড়া থেকে রংপুরে বদলি করেন।

বগুড়া বাস ডিপোর চালক পিন্টু জানান, তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী। গত চারমাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। তার স্ত্রী ম্যানেজারের কাছে অনেক অনুরোধ করেও বকেয়া বেতন আদায় করতে পারেননি।

এদিকে বাস ডিপোতে বেতন-ভাতা নিয়মিত না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া। গত ২৮ জুন তিনি এক চিঠিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমুদয় বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধসহ বেতন হালনাগাদ করার জন্য পুনরায় নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকেই বেতন ভাতা-বকেয়া রয়েছে বগুড়া বিআরটিসি বগুড়া বাস ডিপোতে।

বগুড়া বাস ডিপোর ম্যানেজার (অপারেশন) মফিজ উদ্দিন বলেন বিআরটিসির যাত্রী বেড়েছে এটা ঠিক। কিন্তু বাড়েনি বাসের ভাড়া এবং বাসের সংখ্যা। ভাড়া আগে যা ছিল এখনও তাই রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে বাসের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে। এ কারণে যা আয় হয় তা থেকে বেতন ভাতা পরিশোধ হয় না। প্রতিটি বাস থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান তিনি।

বিআরটিসি পরিচালনা পর্ষদের সদস্য শুভাশীষ পোদ্দার লিটন জানান, ম্যানেজারের নানা রকম অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগসহ চাঁদা আদায়ের তথ্য তাকেও জানিয়েছে কর্মচারীরা। সেখানে ম্যানেজারের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বললেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এছাড়া ভুয়া বিল ভাউচারের বিষয়টিও সত্য। এসব অভিযোগ নিয়ে তিনি ঢাকায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন।

 

Share