গ্যাসের দাম গড়ে ৭৫% বাড়াতে চায় বিতরণ কোম্পানিগুলো

0
109

অনলাইন ডেস্ক : আবারো বাড়ছে গ্যাসের দাম। এরই মধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে বিভিন্ন খাতে ব্যবহূত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম গড়ে ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে এ খাতের ছয়টি বিতরণ কোম্পানি। আগামী ১১ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত পৃথক পৃথক কর্মদিবসে এসব প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করবে বিইআরসি। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, প্রস্তাবিত হারে মূল্যবৃদ্ধি হলে ব্যয় নির্বাহে বিপাকে পড়বে সাধারণ গ্রাহকরা।

বিতরণ কোম্পানিগুলো মূল্যহার সবচেয়ে বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহূত গ্যাসের। এর মধ্যে সার কারখানায় গ্যাসের দাম ২০৬ শতাংশ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম ৩৭২ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে কোম্পানিগুলো।

জানা গেছে, জ্বালানি বিভাগের নির্দেশে গত ২২ এপ্রিল তিতাস গ্যাসসহ সব বিতরণ কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার ও বিতরণ চার্জ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। এতে বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহূত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা করার দাবি জানানো হয়। আর সার উৎপাদনে ব্যবহূত গ্যাসের দাম ২ টাকা ৭১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৮০ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়া হয়। এছাড়া শিল্প খাতের গ্যাসের দাম ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে ৯৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ টাকা এবং সিএনজি তথা ফিড গ্যাসের দাম ৩২ টাকা থেকে ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। তবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেনি কোনো কোম্পানি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মো. আব্দুল আজিজ খান বণিক বার্তাকে বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা তাদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে গ্রাহক প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে গণশুনানির ব্যবস্থা করেছি। বিইআরসির নিয়ম ও নীতি অনুযায়ী এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আগামী ১১ জুন থেকে গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে।

বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১১ জুন গ্যাস সঞ্চালন সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হবে। এরপর ১৩ জুন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (তিতাস গ্যাস), ১৪ জুন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির, ১৮ জুন জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের, ১৯ জুন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির, ২০ জুন পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির ও ২১ জুন সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ভবন মিলনায়তনে এসব শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

দেশে উৎপাদিত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪ টাকা ৩০ পয়সা। আর শুল্ক-করসহ প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম পড়ে ৯ টাকা ৫৫ পয়সা। বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ টাকা ৩৯ পয়সা। তবে আমদানি করা এলএনজি দেশী গ্যাসের সঙ্গে মিশ্রণের পর প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য দাঁড়াবে ১২ টাকা ৮০ পয়সা।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে দৈনিক ৩৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০ কোটি ঘনফুট। অর্থাৎ দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সংকট রয়েছে। এ সংকট ক্রমেই বাড়ছে। ঘাটতি দূর করতে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এরই মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীতে পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) নির্মাণ শেষ করেছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে অথবা জুনের শুরুতে এ টার্মিনাল থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, চড়া দামে জ্বালানি আমদানি নিয়ে উদ্বিগ্ন জ্বালানি বিভাগ। এ বর্ধিত দামের গ্যাস গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে সরকারকে হয় গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে, নয়তো ভর্তুকি দিতে হবে। তাই সরকার দাম বাড়ানোর পথই গ্রহণ করেছে।

সর্বশেষ গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ বাড়িয়েছিল বিইআরসি। ওই সময় দুই ধাপে বর্ধিত এ মূল্যহার কার্যকরের ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। প্রথম ধাপে বাড়ানো হয় গড়ে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা ১ মার্চ থেকে কার্যকর হয়।

সে সময় আটটি খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহূত গ্যাসের দাম। গৃহস্থালির প্রায় সমহারে বাড়ানো হয় বাণিজ্যিকে ব্যবহূত গ্যাসের দামও।

তখন গৃহস্থালিতে প্রথম দফায় এক চুলার ক্ষেত্রে ৬০০ টাকার পরিবর্তে ৭৫০ টাকা ও দুই চুলার ক্ষেত্রে ৬৫০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা বিল পরিশোধ করতে হয় গ্রাহকদের। তবে দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে এক চুলার ক্ষেত্রে মাসিক বিল ৯০০ টাকা ও দুই চুলার ক্ষেত্রে ৯৫০ টাকা করে যে মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা বিইআরসি দিয়েছিল, তা পরবর্তীতে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ফলে ওই ধাপের মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর করতে পারেনি বিতরণ কোম্পানিগুলো।

গত বছর শিল্পে ব্যবহূত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় ১৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহূত গ্যাসের দামও বাড়ানো হয় ১৫ শতাংশের বেশি।

তারও আগে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। ওই সময় গ্রাহক পর্যায়ে সব ধরনের গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়েছিল।