বাম্পার ফলনেও মাথায় হাত রাজশাহীর আম চাষিদের

0
268

রাজশাহী প্রতিনিধি: অনেক আগেই বাগান ফেলে পালিয়েছে ব্যবসায়ীরা। নানা কারণে আমের বাজারে ধ্স নামায় লোকসানে বাগান মালিকরা। গত মৌসুমের তুলনায় এবার অর্ধেক দামেও আমের বাজারে ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না রাজশাহীতে। এই সুযোগটি লুফে নিচ্ছেন ফড়িয়ারা। বর্তমানে কিছুটা দাম বাড়লেও সেটা পাচ্ছে না বাগান মালিকরা।

এ ছাড়া দিন দিন কমছে ফলের রাজার গুণগত মান। বাড়ছে রোগ-বালাইয়ের প্রকোপ। বর্তমানে গাছে গাছে আম পচে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছে চাষিরা। বিশেষজ্ঞদের মতে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দিনদিন বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। ক্ষেত খামার থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আঘাত হানছে এই পরিবর্তন। এর প্রভাব পড়েছে রাজশাহীর ঐতিহ্য আমেও।

আবার প্রকৃতিগত কারণেই স্থানীয়ভাবেও আমের প্রতি মানুষের রুচি কমেছে। এরপরেও আমের ভরা মৌসুমেই চলে রমজান মাস। ইফতার করার পরে আর ধৈর্য থাকেনি আম খাওয়ার। স্থানীয় ক্রেতা পেতে বিভিন্ন রাস্তায় বসেও বিক্রি হয়নি আম। গবেষকরা বলছে, জলবায়ুর বৈরিতা নিয়েই যুগযুগ ধরে অঞ্চলজুড়ে ফলছে সুস্বাদু আম। আর বরাবরই সংকট উৎরে দিচ্ছে উন্নত জাত ও আধুনিক চাষের কলাকৌশল।

প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী, এ বছর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে পাকা আম উঠেছে গত ২০ মে থেকে। ওই দিন থেকে নামানো শুরু দেশি গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম। কৃত্রিমভাবে আম পাকানোর ভুয়া অভিযোগ তুলে আম পাড়াতে দেরি করাটাও আমের বাজার ধবসের কারণ। তবে দেশি গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম অনেক আগেই শেষ হয়েছে।

ল্যাংড়া ও খিরসাপাত (হিমসাগর) শেষের পথে। নাবি জাতের আম আম্রপালিও বাজারে উঠছে। তবে মৌসুমের চেয়ে এসব আম এখনো অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে রাজশাহীর বাজারে।

আম ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম বলেন, গত মৌসুমে এ সময়ে ল্যাংড়া ও খিরসাপাত প্রতি মণ (৪০ কেজি) আমের দাম ছিল ২৬ থেকে ২৭ শ টাকা। এ বছরে যার সর্বোচ্চ দাম ১৪ শ টাকা। গত বছর আম্রপালি বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ৩ হাজার টাকা। মঙ্গলবার তিনি বাগান থেকে আম্রপালি কিনেছেন ১১ শ টাকা মণ। ফজলি বিক্রি হচ্ছে ৮ শ টাকা মণ।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি গ্রামের ছোট আম ব্যবসায়ী শুকুর আলী জানান, আমের দাম না থাকায় প্রতিদিনই বাগান মালিকদের সাথে দেনা-পাওনা নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে। তিনি বলেন উপজেলার বেড়াবাড়ি গ্রামের হাজির বাগান ৮ লাখ টাকা দিয়ে কেনেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক আম ব্যবসায়ী। বাগান মালিককে তিন লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছেন। বাকি টাকা আম নামানোর সময় দেবেন বলে চুক্তি হয়। গাছে গাছে ঝুলছে পাকা আম। কিন্তু তিনি লোকসানের ভয়ে পালিয়েছেন। বর্তমান বাজারে শ্রমিক খরচ দিয়ে আম নামালে ব্যাপক লোকসান হবে। ওই বাগানের মালিক আম নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে আম উৎপাদন হচ্ছে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বৃহত্তর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গত ৭ বছরে এ অঞ্চলে আমের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। গত বছর এ অঞ্চলের ১৭ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। সেখানে উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৮১ হাজার ১০৭ টন। এর আগে ২০১৬ সালে রাজশাহীতে ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়। এর আগে ২০১৫ সালে ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টর এবং ২০১৩ সালে ১৪ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়।