বেনাজির ভূট্টোর স্বপ্নের পাকিস্তান গড়তে চান বিলাওয়াল

0
94

অনলাইন ডেস্ক : পাকিস্তান নিয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনাজির ভুট্টোর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন তার ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি (২৯)। সম্প্রতি বিবিসি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তিনি বেনাজিরের শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল, উন্নতিশীল, গণতান্ত্রিক পাকিস্তানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে এক সমাবেশে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারান বেনাজির।

বর্তমানে পাকিস্তান পিপল’স পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বিলাওয়াল। পাশাপাশি, ২৫ জুলাই প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট নির্বাচনেও লড়তে যাচ্ছেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিপিপি তাদের জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। বেনাজিরের মৃত্যুর পর তাৎক্ষণিকভাবে বিলাওয়াল ও তার বাবা আসিফ আলি জারদারিকে দলের যৌথ নেতৃত্ব দেওয়া হয়। বিলাওয়াল তার পরিবারের মধ্যে তৃতীয় প্রজন্মের রাজনীতিবিদ। সত্তরের দশকে তার নানা জুলফিকার আলি ভুট্টো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

তার পরিবারের রাজনীতিতে রক্তের দাগ লেগে আছে। তবে বিলাওয়াল জানান, তিনি বড় ধরণের রাজনৈতিক দায়িত্ব নিতে ভীত নন। বর্তমানে তার ইশতেহার হচ্ছে, একটি সমমাত্রিক পাকিস্তান। যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের লাভের কথা চিন্তা করা হয়।

যাইহোক, বর্তমান জনমত জরিপ অনুসারে, আগামী নির্বাচনে পিপিপি তৃতীয় স্থান লাভ করবে। প্রথম স্থান থাকবে অযোগ্য ঘোষিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ- নওয়াজ (পিএমএল-এন)। দ্বিতীয় স্থানে থাকবে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন দল পাকিস্তান তেহরিক-ই- ইনসাফ (পিটিআই)।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুকাররাব আকবর বলেন, গ্রামীণ জনগণের কাছে এখনো পিপিপি’ই সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। বিশেষ করে সিন্ধ প্রদেশ হচ্ছে তাদের শক্ত ঘাঁটি। তবে তিনি জানান, দেশটির সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ হচ্ছে পাঞ্জাব। আর সেখানকার অনেক ভোটার মনে করে যে, পিপিপি তাদের শেষ শাসনামলে সন্তুষ্টজনক অবদান রাখতে পারেনি। ফলস্বরূপ, অনেকে পিটিআই’য়ের দিকে ঝুঁকেছে।

এদিকে, বিলাওয়ালের বাবা আসিফ জারদারির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই সপ্তাহের শুরুর দিকে, সুপ্রিম কোর্ট এক তদন্তের দোহাই দিয়ে তাকে দেশত্যাগ না করার নির্দেশ দিয়েছে। বিলাওয়াল জানান, পিটিআই বহুদিন ধরে একটি অপপ্রচার অভিযানের শিকার হয়ে আসছে।

অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, নির্বাচনের পড়ে জোট গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে আবির্ভূত হবে পিপিপি। তবে সেক্ষেত্রে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট অবস্থা সৃষ্টি হতে হবে। সে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে কোন দলই যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে।

পাকিস্তানে বর্তমান নির্বাচনী প্রচারণায়, একটি দুর্নীতি-বিরোধী আদালত নওয়াজ শরিফকে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করার ইস্যু নিয়ে। শরিফের সমর্থকদের দাবি, সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দুর্নীতির অভিযোগ ব্যবহার করেছে। কিন্তু সামরিক বাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের বিষয় অস্বীকার করেছে।

বিলাওয়াল জানান, তিনি বিশ্বাস করেন না যে, নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে কোন অভ্যুত্থান হয়েছে। তবে তিনি নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে দেশটিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, প্রচারণা চালানোর স্বাধীনতা ও মানবাধিকার তীব্র আকারে হ্রাস পাচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, এই সমস্যাগুলো উতরে আসার সেরা উপায়টি হচ্ছে পার্লামেন্টে এদের সমাধান করা। তিনি জানান, এজন্যই তিনি নির্বাচনে লড়ছেন।