মালয়েশিয়ার নির্বাচন বুধবার: মাহাথিরের চ্যালেঞ্জ, কঠিন পরীক্ষায় নাজিব রাজাক

0
109

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মালয়েশিয়ার জাতীয় নির্বাচন বুধবার। নির্বাচনকে ঘিরে দেশটির সাধারণ জনগণ দুই জোটের হয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন। রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক গত ৬ এপ্রিল পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।

এবারের নির্বাচনটি ক্ষমতাসীন জোটের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হতে চলেছে বলে মত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ, বেশ চাপের মুখেই আছেন ৬৪ বছর বয়সী নাজিব। স্টেট ফান্ড অর্থ-কেলেঙ্কারি এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট নয় মালয়েশিয়ার সাধারণ জনগণ।

এদিকে বিরোধী দল থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন পেয়েছেন নাজিবের সাবেক গুরু মাহাথির মোহাম্মদ। এবারের নির্বাচনে আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরকেই এগিয়ে রাখছেন বিশ্লেষকরা।

দেশটির নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান মারদেকা সেন্টার জানায়, জনপ্রিয়তার ভোট জরিপে ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ পেয়েছে মাহাথিরের পাকাতান হারাপান জোট। ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটে দ্বিতীয় স্থানে নাজিবের বারিসান ন্যাশনাল।

টানা ২২ বছর শাসনের পর ২০০৩ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান মাহাথির মোহাম্মদ। লম্বা বিরতি দিয়ে ৯২ বছর বয়সে আবারও নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। দায়িত্ব নিয়েছেন তার সময়ে বরখাস্ত হওয়া উপপ্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের জোট পাকাতান হারাপানের।

মাহাথির মোহাম্মদ যদি নির্বাচনে অংশ না নিতেন, তাহলে এ নির্বাচন একপেশে হতো বলে অনেকের ধারণা। তার সাবেক দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনকে এ নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের কর্মকাণ্ডে হতাশ হয়ে ২০০৩ সালে এ দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। সেখান থেকে পদত্যাগের পর মাহাথির মোহাম্মদ নিজেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। দলটি সরকারবিরোধী জোটে যোগ দেয়।

মালয়েশিয়ার সরকারবিরোধী জোট প্রধানমন্ত্রী পদে লড়াইয়ের জন্য মাহাথির মোহম্মদকে নির্ধারণ করেছে। সরকারবিরোধী এ জোটের নেতা ছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় থাকার সময় আনোয়ার ইব্রাহিম ছিলেন তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি।

১৯৯৯ সালে আনোয়ার ইব্রাহিমকে সমকামিতার অভিযোগে কারাগারে পাঠান মাহাথির মোহাম্মদ। ২০০৩ সালে মাহাথির মোহাম্মদের বিদায়ের পর ২০০৪ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান ইব্রাহিম। ২০১৩ সালের নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন নাজিব রাজাকের দলের বিরুদ্ধে লড়াই করেন।

ওই নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের দল অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছিল এবং নাজিব রাজ্জাকের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়। এরপর ২০১৫ সালে সেই সমকামিতার অভিযোগে আনোয়ার ইব্রাহিমকে আবারো জেলে পাঠানো হয়। এখন আনোয়ার ইব্রাহিমের বিরোধী জোট থেকেই নির্বাচন করছেন মাহাথির মোহাম্মদ।

নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে কিছুদিন পর আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলে এমনটাই পরিকল্পনা রয়েছে বিরোধী জোটের।

মাহাথির মোহাম্মদ মনে করেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ক্ষমতা থেকে সরানোই হচ্ছে আসল উদ্দেশ্য।

নির্বাচনী এক ভাষণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক অভিযোগ করেন, বিরোধীজোটের অন্তর্ভুক্ত ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন পার্টি ড. মাহাথির মোহাম্মদকে ব্যবহার করছে।

এ দিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে তিনি ৭০০ মিলিয়ন ডলার নিজের অ্যাকাউন্টে সরিয়েছেন।

মরাজাক বলেছেন, এ অর্থ সৌদি সরকারের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে।

এবারের বিরোধী জোটের প্রচারণার মূল ইস্যু হলো নাজিব প্রবর্তিত জিএসটি বাতিল এবং ১ এমডিবি দুর্নীতির ইস্যু। অন্য দিকে সরকারি জোটের প্রচারের মূল বিষয় হলো রাষ্ট্রের স্থিতি ও ধারাবাহিকতা এবং চীনা আধিপত্য রোধ।

উভয় পক্ষের প্রচারণার প্রভাব কমবেশি ভোটারদের ওপর পড়ছে। গত কয়েক বছরের বিরোধী জোট ও মাহাথিরের প্রচার-প্রচারণায় প্রধানমন্ত্রী নাজিবকে একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা গেছে বলে মনে হয়।

তবে এই প্রচারণা শহুরে মালয়দের যতটা প্রভাবিত করেছে ততটা গ্রামীণ মালয়দের প্রভাবিত করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। তাদের কাছে বিরোধী জোটের মূল আবেদন হিসেবে কাজ করছে ক্ষমতায় যাওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে জিএসটি বাতিলের বিষয়টি। বিরোধীপক্ষ ক্ষমতায় গেলে চীনা প্রাধান্য সৃষ্টির প্রচারণাও গ্রামীণ মালয়দের কমবেশি প্রভাবিত করছে বলে অনেকের ধারণা।