রাঙামাটিতে সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান শুরু

0
61

রাঙামাটি প্রতিনিধি : ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পাহাড়। বিগত দুই দিনে দুই দলের শীর্ষ দুই নেতাসহ ঝরেছে ছয় প্রাণ। সাম্প্রতিক সময় পাহাড়ে হত্যা, খুন ও গুমের ঘটনায় উদ্বিগ্ন সাধারণ লোকজন। গেলো বছর শান্তি চুক্তির বিশ বছর পূর্তির পরপরই ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠে এখানকার রাজনীতি।

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এপর্যন্ত হামলায় নিহত হয়েছেন ১২ জন। নিহতের তালিকায় শুধু জেএসএস-ইউপিডিএফ নয়, ছিল আওয়ামী লীগ নেতাও। আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের নেতাকর্মী হত্যার জন্য সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএসকে দায়ী করছে। তবে জেএসএস বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এদিকে গত দুই দিনে সন্তু লারমার জেএসএস থেকে বেরিয়ে আসা জেএসএস-এমএনলারমার শীর্ষ নেতা অ্যাডভোকেড শক্তিমান চাকমা ও প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) থেকে বেরিয়ে নতুন দল করা ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দলের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হওয়ায় পাহাড়ের রাজনীতি নতুন মোড় নিচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তারা এসব হানাহানি বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানান।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আহত কিংবা নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে পুলিশ বলছে অপরাধীদের ধরতে তৎপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার এস এম মনিরুজ্জামান। নানিয়ারচরে বিশেষ আইন শৃঙ্খলা সভায় তিনি বলেন, অপরাধী যেই হোক না কেনো তাকে ছাড় দেয়া হবে না। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে। পাহাড়ে আর কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না।

এদিকে নিহত মাইক্রোবাস চালক মো. সজীবের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং জেএসএস-ইউপিডিএফ’র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে তিন পার্বত্য জেলায় ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে বাঙালি ছাত্র পরিষদ।

শুক্রবার ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকেই থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায়। ঘটনাস্থলে ও নানিয়ারচর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। টহলে রয়েছে সেনাবাহিনী।

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের সাড়াশি অভিযান চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নানিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুর লতিফ জানান, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে সাড়াশি অভিযান চালাচ্ছে।

দুর্বৃত্তদের ব্রাশফায়ারে হতাহতদের নেয়া হয়েছিল খাগড়াছড়ি হাসপাতালে। শুক্রবার বিকেলে নিহতদের মধ্যে সুজন চাকমা ও সেতুলাল চাকমার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। পরে শনিবার দুপুরে মহালছড়ি পারিবারিক শ্মশানে তাদের দাহ করা হয়। এছাড়াও নিহত মাইক্রোবাস চালক মো. সজীবকে নেয়া হয়েছে তার গ্রামের বাড়ি বরিশালে।

অপরদিকে শনিবার দুপুরের পরে তপন জ্যোতি চাকমা ও তনয় চাকমার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে খাগড়াছড়ি সদরের শ্মশানে দাহ করা হয়েছে।

ডিআইজি ড. এস এম মনির উজ জামান বলেন, যেকোনো মূল্যে আমরা সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করবো। ইতোমধ্যে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই পুলিশ সাধারণ লোকজনের পাশে আছে এবং সরকারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে আর এক ফোটা রক্ত মাটিতে ঝরলে সেটি কঠোরভাবে দমন করা হবে। এই ব্যাপারে কোনো ছাড় দিবো না।

শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটির নানিয়ারচরের বেতছড়ির কেংক্রাছড়ি নামক স্থানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ ৫ জন নিহত ও আটজন আহত হন। এরা সকলেই বৃহস্পতিবার দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।

এদিকে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাহাড়ে জেএসএস-ইউপিডিএফ যেভাবে রক্তক্ষয়ী খেলায় মেতেছে সেখানে সাধারণ নিরীহ বাঙালীরাও প্রাণ হারাচ্ছে। শুক্রবার নানিয়ারচরের ঘটনায় নিহত মাইক্রোবাস চালক মো. সজীব তালুকদারের হত্যার বিচারের দাবিতে এবং পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন জেএসএস-ইউপিডিএফ’র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে তিন পার্বত্য জেলায় ৪৮ ঘণ্টা হরতাল পালন করা হবে। যদি দাবি মানা না হয়, তবে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।